Tuesday, September 3, 2024


‘বদলে না যাওয়া’ বাংলাদেশ

ড. এম জসিম আলী চৌধুরী
প্রভাষক, ইউনিভার্সিটি অব হাল, যুক্তরাজ্য

লেখাঃ ১৩ জুন ২০২৪
প্রকাশঃ দৈনিক আজকের পত্রিকা (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪)
পত্রিকার লিংকঃ https://epaper.ajkerpatrika.com/textview/123671/1995161664.html 


১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সদ্য ভূমিষ্ঠ রাষ্ট্রের সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং স্বাধীনতার সরকারি ঘোষণাপত্র (প্রকলেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স) প্রকাশ করে। ঘোষণাপত্রে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় গণতন্ত্র, জনগণের ক্ষমতায়ন ও আইনের শাসনের অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়। অঙ্গীকারটি কেবল কথার কথা ছিল না। এর পেছনে দেশের স্বাধীনতাকামী নেতৃত্বের গভীর সংকল্প ও সদিচ্ছা ছিল। দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনার স্বার্থে ওই সময় রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা হলেও যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক মাসের ভেতরেই তারা সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় ফেরত যায় (অন্তর্বর্তী সংবিধান আদেশ, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২)। রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা থেকে অধিকতর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি এবং তাঁর সহযোদ্ধারা সময় নিতে পারতেন। নতুন দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়নের জন্য অপেক্ষা করার অজুহাত দিতে পারতেন। ইচ্ছের সততায় (সিনসিয়ারিটি অব ইনটেনশন) তাঁরা সেটি করেননি। অন্তর্বর্তী সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীশাসিত সংসদীয় সরকারের চেতনা, আবহ ও কাঠামোর সুস্পষ্ট চিত্রায়ণ ছিল। এটিই ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে গৃহীত সংবিধানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রকাঠামোটি মোটা দাগে এমন—ব্রিটিশ রাজার আদলে দেশের প্রতীকী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং জনগণের রায়ে নির্বাচিত ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা নিয়ে দেশের নির্বাহী বিভাগ গঠিত (সংবিধানের চতুর্থ ভাগ)। জনগণের রায়ে নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে দেওয়া হয়েছে আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের প্রাত্যহিক ও চূড়ান্ত জবাবদিহির দায়িত্ব (সংবিধানের পঞ্চম ভাগ)। রাষ্ট্রীয় জীবনে সংবিধানের বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রের আইনকানুন প্রয়োগে সরকারের ক্ষমতা চর্চার লাগাম টানা, জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দায়িত্ব পড়েছে বিচার বিভাগের ওপর (সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগ)। দেশের তৃণমূলে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে সংবিধানের নির্বাহী বিভাগ অংশে উল্লেখ করা হলেও সেখানে কেন্দ্রের বা আমলাতন্ত্রের শাসনের বদলে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসনের নিশ্চয়তা দিতে আলাদা অধ্যায় যোগ করা হয়েছে (সংবিধানের চতুর্থ ভাগ, তৃতীয় অধ্যায়)।

সরকার, সংসদ ও আদালতের বাইরে একেবারে আলাদা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে তুলে ধরা হয়েছে (সংবিধানের সপ্তম ভাগ)। সংবিধানের অষ্টম ভাগে আলাদা করে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রের মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়কে। সংবিধানের নবম ভাগে দেশের জনপ্রশাসনে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও মৌলিক কিছু সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। আমলাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি কর্মকমিশনকেও আলাদা করে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে (নবম ভাগ, দ্বিতীয় অধ্যায়)। সংবিধানে সরকার, সংসদ ও আদালতের মতো বড় বড় তিনটি প্রতিষ্ঠানের পাশে এ চারটি তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানকে এমন বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করাটা অর্থহীন কিছু নয়। সন্দেহ নেই, আমাদের স্বাধীনতার নায়করা দেশের তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত গণতান্ত্রিক শাসন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি বাছাই, রাষ্ট্রীয় তহবিলের জবাবদিহি এবং জনপ্রশাসন তথা আমলাতন্ত্রের রাজনীতি ও দলীয়করণমুক্ত থাকাকে এই পুরো কাঠামোর ভিত্তি বলে মেনেছেন।

সংবিধান প্রণয়নের ৫২ বছর পর পেছন ফিরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোটিকে দেখলে আমাদের কিছুটা বিষণ্ণতা গ্রাস করে। ৫০ বছরের এ যাত্রায় এ কাঠামোর অনেক বাঁকবদল ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। আমরা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের সরকার, জাতীয় দলকেন্দ্রিক রাষ্ট্রপতির সরকার, সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রপতির সরকার, নির্বাচনকালীন অনির্বাচিত সরকার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিযোগিতামূলকভাবে কর্তৃত্ববাদী সংসদীয় সরকারব্যবস্থার ভেতর দিয়ে গেছি। এত সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষে এসে দেখা যাচ্ছে, আমাদের স্বাধীনতার নায়করা যে রাষ্ট্রকাঠামো বাতলে গেছেন, সেটির কঙ্কালসার অবয়বটিই কেবল অবশিষ্ট আছে। কাঠামোটির অন্তর্গত চেতনা, লক্ষ্য ও আদর্শ হারিয়ে যেতে বসেছে।

মোটা দাগে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সরকারগুলো প্রতিষ্ঠান বা সংবিধানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়ার চেয়ে ব্যক্তি বা দলীয় প্রধানকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। দেশের একাডেমিক মহলে একটি মৃদু সমালোচনা আছে যে সংবিধানপ্রণেতারা সংসদীয়ব্যবস্থার ভেতর সরকারপ্রধানের ক্ষমতা কিছুটা বেশি দিয়েছিলেন। গভীর বিবেচনায় এ সমালোচনাটিকে কিছুটা অপরিপক্ব বলে মনে হয়। ১৯৭০ সালের এক পাবলিক লেকচারে লর্ড হেইলসাম ব্রিটিশ ওয়েস্টমিনস্টার ব্যবস্থাকে ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরতন্ত্র’ আখ্যা দিয়েছিলেন। এ ব্যবস্থাটি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে স্বীকার করেই সাজানো। এখানে নিয়ন্ত্রণ আসে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ চাপ, সংসদের বিরোধী দল, শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র স্থানীয় সরকার, স্বাধীন বিচার বিভাগ, শক্তিশালী গণমাধ্যম ও জবাবদিহি নিশ্চিতকারী অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। আমাদের মতো উপনিবেশ-পরবর্তী রাষ্ট্রগুলোতে জবাবদিহির এ ব্যবস্থাগুলো অনুপস্থিত থাকায় বা শক্তিশালী না হওয়ায় ওয়েস্টমিনস্টার ব্যবস্থার প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিকতাটিকে অতিরিক্ত চোখে পড়ে।





























বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় কখনো কখনো নির্বাচিত প্রতিনিধির শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা গেলেও সেটি সংহত, নিরবচ্ছিন্ন ও কার্যকর হওয়ার আলামত সুস্পষ্ট নয়। স্থানীয় সরকারে কেন্দ্রীয় সরকার ও মাঠপর্যায়ের আমলাতন্ত্রের হস্তক্ষেপ জোরালো। গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপপ্রবণতা। এতগুলো ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে অযাচিত হস্তক্ষেপ দেশের স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে অনেকটাই জিম্মি করে ফেলেছে। আমলাতন্ত্রের রাজনীতি-নিরপেক্ষ পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার মতো পরিবেশ, পরিস্থিতি বা এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কখনোই দেখা যায়নি। স্বাধীন স্বতন্ত্র সরকারি কর্ম কমিশনও দৃশ্যমান হয়নি।

বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের আইনসভা সে অর্থে সরকারের জবাবদিহির জায়গা হয়ে উঠতে পারেনি। প্রায় সবাই এ জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদকে দায়ী করলেও সংসদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব-প্রতিপত্তি কেবল সংসদ সদস্যদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে না পারার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বলেই মনে হয়। আসল সমস্যাটি আমাদের রাজনৈতিক দলব্যবস্থার ভেতর থেকে আসে, যেখানে গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তৃণমূলের পছন্দে দলের মনোনয়ন লাভ বা নেতৃত্বের স্থানে উঠে আসার সুযোগ অনুপস্থিত। ফলে সংসদ সদস্যের পক্ষে দলের প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের বিরোধিতা করা বা সরকারের নীতির বিরোধিতা করা অনেকটাই রাজনৈতিক আত্মহত্যার শামিল। ব্যাপারটি শুধু সংসদে ভোট দেওয়াতে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সংসদের প্রশ্নোত্তর, সংসদীয় বিতর্ক বা সংসদীয় কমিটির জবাবদিহিমূলক কর্মকাণ্ডের পুরোটাতেই প্রভাব ফেলে।

জনপ্রিয় ভাষ্যে দেশের বিচার বিভাগকে ‘জনগণের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল’ বলা হলেও সামরিক শাসন এবং অনেক রাজনৈতিক সরকারের সময়ও বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগকে খুব বেশি নাড়া দিতে পারেনি। উচ্চ আদালতের নিয়োগপ্রক্রিয়ার অতি রাজনৈতিকীকরণের প্রবণতা প্রায়ই দৃশ্যমান ছিল। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ৬ অনুচ্ছেদে সংবিধানপ্রণেতারা স্পষ্টভাবে অতিসত্বর নিম্ন আদালত পৃথক্‌করণের তাগিদ দিয়েছিলেন। অথচ কাজটি শুরু করতে আমাদের প্রায় ৩৫ বছর লেগেছে (২০০৭) এবং এর পরের ১৮ বছরেও আমরা কাজটি পুরোপুরি সমাধা করতে পারিনি।

সন্দেহ নেই যে আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং এতে জনগণের আস্থা ফেরার আশু কোনো লক্ষণ নেই। অনেকে এটার জন্য দলগুলোর আদর্শিক অবস্থানের চরম মেরুকরণ, এর ফলে সৃষ্ট প্রতিহিংসা ও ক্ষমতার রাজনীতিকে দায়ী করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি এটাকে দলব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রহীনতার সমস্যা বলে মনে করি। আন্তদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জারি থাকলে আন্তদলীয় প্রতিযোগিতা অনেকটাই গা-সওয়া হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা লাভ বা হারানোকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হতো।

মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়কে সংবিধানপ্রণেতারা যেভাবে একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চেয়েছেন, সেটি আদতে হয়নি। এটি সরকার প্রশাসনের ভেতর একেবারে আত্তীকৃত হয়ে গেছে। আলাদা করে জনগণের চোখে পড়েনি। আমলাতন্ত্রের জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংসদের নিজস্ব ব্যবস্থা হিসেবে ন্যায়পাল নিয়োগের একটি বিধান (৭৭ অনুচ্ছেদ) সংবিধানপ্রণেতারা দিলেও সেটি এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। সময়ে সময়ে আইনের মাধ্যমে কিছু জবাবদিহির প্রতিষ্ঠান (যেমন দুর্নীতি দমন, মানবাধিকার, তথ্য ও নদী কমিশন) আমরা তৈরি করেছি বটে, কিন্তু সেগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে চেয়েছি—এমনটা দাবি করা কঠিন।

যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির শিক্ষক ড. কুমারাসিঙ্গাম দক্ষিণ এশিয়ার সরকারব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর পিএইচডি থিসিসে তিনি দাবি করেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যখন প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, তখন ওয়েস্টমিনস্টার ব্যবস্থাটি একধরনের ‘ইস্টমিনস্টার’ ব্যবস্থায় পর্যবসিত হয়। কিছুটা হেঁয়ালি করে বলা যেতে পারে, আমাদের স্বাধীনতার নায়করা সম্ভবত একটি ‘ইস্টমিনস্টার’ ধাতে বেড়ে ওঠা সমাজকে একটি ‘ওয়েস্টমিনস্টার’ ধাঁচের রাষ্ট্রকাঠামো দিতে চেয়েছেন। ফলে বিগত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বৈষয়িক উন্নয়ন সূচকের অভাবনীয় বদল হলেও রাষ্ট্রকাঠামোর গোড়ার সংকটে তেমন বদল হয়নি। এ ক্ষেত্রে সম্ভবত আমরা অনেকটাই ‘বদলে না যাওয়া’ বাংলাদেশ।

Monday, September 2, 2024



সংস্কার লগ্ন (Reform Window)
ড এম জসিম আলী চৌধুরী
প্রভাষক, আইন, ইউনিভার্সিটি অব হল, যুক্তরাজ্য

২৪ অগাস্ট ২০২৪ (ফেসবুক পোষ্ট)



বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক সাহেব একজন দাম্ভিক মানুষ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। সেটা শুধু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নয়। চার দলীয় জোট সরকারের ২০০১-২০০৬ মেয়াদেও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে তিনি ট্রাফিক পুলিশের সালাম দেয়া না দেয়া সহ নানাবিধ ছোটখাট ব্যাপারে অতিরিক্ত একগুঁয়েমি দেখানো, অ-বিচারক সুলভ ও অশোভন আচার-আচরণ করেছেন। উনার আচরণ, কথাবার্তা এবং চলন-বলনের ভেতর প্রজ্ঞা, ধৈর্য, ভিন্নমত ধারণকারীকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়ার প্রবণতা বা এমনকি সমালোচকেরও শ্রদ্ধা অর্জনের মতো কোন কিছু চোখে পড়তো না। নিজের পেশাগত ও সামাজিক অবস্থানের তোয়াক্কা না করে তিনি আচরণ করতেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর একেবারে মাঠ পর্যায়ের গুন্ডাপান্ডা টাইপের লোকদের মতো করে।

সংবিধান নিয়ে পড়ালেখা করতে গিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের দেয়া বিভিন্ন রায়গুলোতেও জুরিসপ্রুডেন্সিয়াল কোন ডেপথ আমি কখনো পাই নি (সেটি এমনিতেও আমাদের খুব বেশি রায়ে পাওয়া যায় না)। উনাকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে কোথাও রেফারও করি না।

তারপরও দুঃখ লাগছে, গ্রেফতার হওয়ার সময় হতে উনার সাথে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আচরণ সহ আদালত প্রাঙ্গণে উনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো দেখে। গতকাল গ্রেফতার হওয়ার পর, উনার দুর্দশা ও লাঞ্ছনাকে অনেকেই "ন্যাচারাল জাস্টিস" বলছেন। হয়তো হতেও পারে। আল্লাহ্‌র বিচার নিয়ে আমি বান্দার বুঝ ব্যবস্থা সীমিত। এই "ন্যাচারাল জাস্টিস" থেকে কোন শিক্ষা হয়তো ক্ষমতার বলয়ে আসা-যাওয়া করতে থাকা মানুষরা কেউ নিতে পারেন (যদিও এমন শিক্ষা আমি আজ পর্যন্ত কাউকে নিতে দেখি নি)।


দুনিয়ার আদালতে আমরা যদি উনার সাথে উনার মতোই আচরণ করি, তাহলে উনার সাথে আমাদের পার্থক্য কি হল? উনাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ধরে নিচ্ছি, আচরণগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শ জনিত নিন্দাবাদ ছাড়া, উনার বিরুদ্ধে ঠিক কি ধরনের ফৌজদারি বা দেওয়ানি অভিযোগ আনা হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয় নি। রাষ্ট্রের কাছে একজন দাগী অপরাধীরও নুন্যতম প্রাপ্য কিছু থাকে। অতীতের কর্দমাক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ভেঙ্গে চুরে প্রত্যাশিত বা প্রতিশ্রুত নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা যদি আসলেই আমরা গড়তে চাই তাহলে এই 'আপাতত আগেরগুলোর শোধ তুলে নিই, সংস্কার পরে দেখা যাবে" মানসিকতাটা কোন শুভ সংকেত দেয় না।

হয়ত কেউ কেউ ভাবতে পারেন, রাজনৈতিক ভাবাদর্শে আমি আওয়ামী লীগ ঘরানার লোক বলে শুধুমাত্র শামসুদ্দিন মানিক সাহেবেরটা বেশি করে দেখছি। ব্যাপারটা আসলেই তেমনটি না। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নিয়ে আমার প্রকাশিতব্য বইটিতে আমি দেখাতে চেষ্টা করেছি কিভাবে, কেন এবং কোন মানসিক ও সামাজিক ব্যধির চক্রে পড়ে আমাদের ৫৩ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে আসা পাঁচ-পাঁচটি সংস্কার লগ্ন (Reform Window) ব্যর্থ হয়ে গেছে এবং আমরা ঘুরে ফিরে সেই আগের পাক-চক্রে পড়ে থেকেছি। আমার বইয়ে আলোচিত পাঁচটি সংস্কার লগ্ন হচ্ছে - ১৯৭২ এ স্বাধীন দেশের যাত্রা শুরুর মুহূর্ত, ১৯৭৫ এর মধ্য অগাস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরের মুহূর্ত, ১৯৯০ এর গণ অভ্যুত্থান এর পর গণতন্ত্রের পথে নবযাত্রার মুহূর্ত, ২০০৭ এর ১/১১র পর মাইনাস টু ফর্মুলায় দুর্নীতিমুক্ত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির আশা দেয়ার মুহূর্ত, এবং ২০০৯ এ ভুমিধ্বস বিজয় নিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের মুহূর্ত।

দুঃখজনকভাবে প্রতিটি বাঁক বদলের মুহূর্তই চরম ব্যর্থতায় কালের গর্ভে হারিয়েছে। আশা করি ও দোয়া করি - এই ষষ্ট মুহূর্তটিও কালের গর্ভে না হারাক।


সংশোধন, সংস্কার বা "নতুন সংবিধান" এর "একিলিস হিল"

ড এম জসিম আলী চৌধুরী
প্রভাষক, আইন, ইউনিভার্সিটি অব হল, যুক্তরাজ্য



আমাদের নতুন শাসকরা "রাষ্ট্র সংস্কার"র এক সুদূর প্রসারী কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছেন। তাঁদের মৌলিক এজেন্ডায় সন্দেহাতীতভাবে সংবিধান থাকবে। তাঁরা এটা নিয়ে কতদূর যাবেন সেটিই সম্ভবত এখন হিসেব নিকেশ হচ্ছে। এ ধরণের উচ্চভিলাষী কর্মযজ্ঞের একটা "একিলিস হিল" আছে।

আমাদের নব্বই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যক্তি বদল করে এবং নির্বাচনী কিছু আইন সংশোধন করে তাঁদের সংস্কার কর্মসূচী শেষ করতেন। তারপর একটা নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতেন। তাদের তুলনায় ২০০৭-০৮ এর "তত্ত্বাবধায়ক সরকার" (আমি অবশ্য এটাকে সংবিধান বহির্ভুত সেনা সমর্থিত সরকার বলতে স্বচ্ছন্দ) বেশ আগ্রাসী ছিলেন। "দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা" ও "মাইনাস টু" রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জিগির তুলে তারা দেশের আইন কানুনেও বেশ অনেকটা সংশোধন করেছিলেন। মঈন উদ্দিন আহমেদ সাহেব রাখঢাক না রেখেই "মেধাবী ও তরুণ প্রজম্ম"কে দিয়ে একটা "জাতীয় সাংবিধানিক কনভেনশন" করে সংবিধান নতুন করে লেখার কথা বলেছিলেন। তিনি স্পস্টভাবেই জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সাহেবের মতো করে রাজনৈতিক দল গঠনের কাজকর্ম শুরু করেছিলেন। হালে পানি পাওয়ার আশায় ভারত সফরেও গিয়েছিলেন। আমেরিকা ও ইইউ ব্লকের যারা ১/১১-র স্পন্সর ছিলেন তাদের পূর্ণ সমর্থন পান নি বলে হয়তো শেষমেশ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

সন্দেহ নেই আমাদের বর্তমান সরকারটি ১৯৯০ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর মত নয়। ১/১১ এর মতো সংবিধান বহির্ভুত হলেও, এটি ওই সেনা সমর্থিত সরকারের চেয়ে অনেক বেশী জনগণ সংশ্লিষ্ট এবং এই সরকারের ম্যান্ডেট অনেক বেশি শক্তিশালী। তারপরও এর "সংস্কার এজেন্ডা"র সবচেয়ে বড় সংকটটি - যেটিকে আমি এর "একিলিস হিল" বলতে চাই - সেটি তুলে ধরা বাঞ্চনীয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিপদজনক প্রশ্ন হচ্ছে - কাদের ইচ্ছায়, কাদের আদর্শিক অবস্থানকে প্রায়োরিটি দিয়ে সংস্কার হবে। সংস্কারের এজেন্ডা কি হবে, কোথায় সংস্কার হবে এবং কারা এই সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশীজন হবেন। বিশেষত সমাজের সব মত-পথের মানুষকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংষ্কার না হলে দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো সংস্কারও মুখ থুবড়ে পরে। সমস্যা হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়াটা সবসময় সহজ কাজ নয়। যেমন ধরুন এখনকার বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের অংশ নেয়া তো দূরের কথা, ছায়া মাড়ানোর কথা বলাও বিপদজনক। "জনগণ" "পরাজিত"দের মুখ দেখতেই চায় না। যে কোন রাজনৈতিক বিপ্লবের পর যারা হেরে গেছেন তাদের সাথে কথা বলার চিন্তা করাও অকল্পনীয়। এটি জনতুষ্টিবাদী গণতন্ত্র (Populist Democracy)-র একটি "একিলিস হিল"।

এটি "একিলিস হিল" কারণ এ আপদ চাইলেই মুছে ফেলা যায় না। একে মেনে নিয়েই কাজ সারতে হয়। একে ইগনোর করে বিজয়ীরা হয়ত তাৎক্ষণিক জেতেন। তবে দূরের কোন একদিন আবার ওই আপদ মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। "জনগণ"ও ততোদিনে "জয়ী"দের থেকে মুখ ফিরিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকাতে শুরু করে। পেছন দিকে তাকানোর কথাটা এই মুহূর্তে আমাদের অনেকেরই বিশ্বাস হবে না। তারপরও মনে করা যেতে পারে ১৯৭২ সালের জানুয়ারীর কথা।

বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন। অন্তর্বর্তী সংবিধান দিলেন। সে অনুযায়ী ১৯৭২ এর ডিসেম্বরে একটা সংবিধান হলো। সংবিধান প্রণয়ন, এর উপর জন মত যাচাই, সংশোধন প্রস্তাব আহবান ও বিবেচনা, দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সাথে আলাপ-সালাপ সবই হলো। সংবিধান প্রণীত হয়ে যাওয়ায় পর রাশিয়া ও চীন ঘেঁষা বাম রাজনৈতিক দল এবং আমেরিকা ঘেঁষা প্ৰধান বিরোধী দল (জাসদ) সহ সর্বস্তরের বিরোধী দলের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এলো। মস্কো পন্থী বাম-রা সমর্থন দিলেন। চীনপন্থী বাম-রা ১৯৭০ এর নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বাধীন দেশের সংবিধান প্রণনয়নের অধিকার বা ম্যান্ডেট আছে কিনা জিজ্ঞেস করলেন। বললেন, ১৯৭০ এর বিজয় এক জিনিস আর ১৯৭২ এর সংবিধান প্রণয়ণ আরেক জিনিস (তেমন প্রশ্ন এখন যারা ছাত্র আন্দোলনের ফলে ক্ষমতায় এসেছেন তাঁরাও ফেস করতে পারেন)। জাসদের পক্ষ থেকে সংবিধানটিকে "বৈজ্ঞানিকভাবে সমাজতান্ত্রিক নয়" বলে সমালোচনা করা হলো এবং বলা হলো, তাঁরা ক্ষমতায় আসলে এটি ছুঁড়ে ফেলে দেবেন।

এবার দেখুন ১৯৭২ এর সংবিধানের "একিলিস হিল"টা কোথায়। পুরো সংবিধান প্রনণয় ও এর সমালোচনা পক্রিয়ায় মুসলিম লীগ (১৯৭১ এর আগে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধী), জামায়াত ইসলামী, নেজামে ইসলামীসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর যে বিশাল সামাজিক অবস্থান ও সমর্থক গোষ্টি দেশে রয়ে গেছে তাদের কোন পালস, অনুভূতি, বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়া শোনার, জানার বা চিন্তায় নেয়ার গরজ কারো পড়ে নি। কারণ তারা তখন বিপ্লবের "পরাজিত পক্ষ"। আজকের মতো সেদিনও "জনগণ" ও তাঁদের নেতারা "পরাজিত"দের মুখ দেখা তো দূরের কথা, ছায়া মাড়াতেও রাজী ছিলেন না। বাস্তবতা হচ্ছে, আপনি কাউকে না দেখলেই তারা অস্তিত্বহীন হয়ে যায় না। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ এ জাসদ না, ইসলাম পন্থী দলগুলোর সমর্থনপুষ্ঠ গোষ্ঠীরাই রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৯৭২ এর সংবিধানের খোল নলচে পাল্টে দেন। আমাদের মতো ডিভাইডেড সোসাইটিতে এটিই যে কোন বিপ্লবের, সংস্কারের বা সংবিধানের "একিলিস হিল"। দুই বছর আগে, ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস উপলক্ষে ইংরেজি দৈনিক "দ্য ডেইলি স্টার" এ আমি লিখেছিলাম (লিংক প্রথম কমেন্টে) -

"[T}he total exclusion of the religious-conservative political elements from the constitution-making process (how logical it appeared in 1972) had reduced (if not dislodged) the Constitution's political morale. In 1972, an essential requirement of the parliamentary system – conservative-liberal bipartisanship, was conspicuously missing. The conservative political elements of undivided Pakistan - the Muslim League (ML) and Jamaat-e-Islami (JI), actively opposed the liberation of Bangladesh. They lost their right to exist in the newly independent country, but the pro-Soviet leftists could not fill the vacuum with their insignificant mass base in society. So, the seismic political change of 1975 led to a quick resurgence of the radical right. From that point onwards, Bangladesh's constitutional unmaking has been rapid. Avenging their exclusion from the constitution-making process, the religious nationalists would actively deconstruct the Constitution and its foundational pillars."



[শেষ কথা: অনেকেই হয়তো ভাবছেন আমি ইনিয়ে বিনিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে সংলাপ করতে বলছি। না। আমার ঘাড়ে দুইটা মাথা নেই।আওয়ামী লীগ নিজেই এখন কোথাও বসার মতো অবস্থায় নেই (যেমনটি ১৯৭২ এ মুসলিম লীগ, জামায়াত ইসলামী ছিলো না)। আমি বলছি বর্তমান সংস্কার প্রক্রিয়াটিকে যতদূর সম্ভব রাজনৈতিক রাখার কথা। সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান প্রনণয়নের কাজটি নির্বাচনের পর জয়ী সরকারী ও বিরোধী দলের হাতে ছেড়ে দিলেই হয়তো তারা বর্তমানের "বিপ্লবী উত্তেজনার" ক্ষণটা পেছনে ফেলে ঠান্ডা মাথায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে যেতে পারবেন। আগামীর সরকারি দল ছাত্রদের নব গঠিত কোন রাজনৈতিক দল, বিএনপি বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল যে-ই হোক, তাঁরা যে পুরো অন্তর্ভুক্তিমূলক হবেন সেটা নিশ্চিত নই (যেমন ২০১১ সালে ১৫-তম সংশোধনীর সময় সে রকম একটা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা গোঁয়ার্তুমি করেছেন)। তবে তাঁদের একিলিস হিল-টা হয়ত বর্তমানের অরাজনৈতিক সরকারের চেয়ে কম হবে। বিপ্লব ভালো। তবে প্রতিটি বিপ্লবের উত্তেজনার ভেতরেই এর ধ্বংসের বীজ লুকিয়ে থাকে।]

ডেইলি স্টারের লেখাটির লিংক: Constitution-making and unmaking in Bangladesh | The Daily Star

Friday, June 28, 2024




Md. Imamunur Rahman, and
Dr. M. Jashim Ali Chowdhury


The Daily Star, Law and Our Rights (Dhaka: 28 June 2024)



Bangladesh's Constitution has seen its "basic structures" altered by several amendments. Several of those amendments altered the Constitution so drastically that we tend to call them "constitutional dismemberments"– a term borrowed from Professor Richard Albert of the University of Texas at Austin. The Supreme Court of Bangladesh declared some, such as the Fifth and Seventh, constitutional amendments, unconstitutional. Some, such as the Fifteenth, were never formally challenged.

The Fifteenth Amendment of 2011 arguably tried to protect the Constitution's basic structures from amendment, destruction, or dismemberment. It introduced Article 7B, granting an "unamendable" status to some unspecified "basic structures" and a large number of specific constitutional provisions. These include the Preamble, Parts I, II, III, and Article 150 accommodating the Fourth to Seventh Schedules of the Constitution. While proponents see Article 7B as a shield against democratic erosion, critics view it as a paradoxical grip that freezes the Constitution in time, hindering future generations' capacity to bring changes.




Some argue that Article 7B contradicts the core value of popular sovereignty (Article 7) by rendering certain provisions unalterable. It effectively militates against the people's right to self-determination, creating a constitution whose parts are considered unchallengeable. With the past dictating the present and future, some may call it a "Dead Men's Constitution." The architects of the Fifteenth Amendment, though alive now, are not eternal. Their vision, enshrined as unalterable law, raises a crucial question: Should the unalterable will of a bygone era dictate the aspirations of a living and evolving population?

Further, Article 7B undermines the core principle of a "living constitution" that should adapt alongside a nation's circumstances. Drafted in a specific historical context, a Constitution may no longer perfectly reflect the needs of a nation that has evolved over decades. However, Article 7B shackles future generations to a rulebook they may disagree with and lack legitimate means to change. This rigidity creates a breeding ground for frustration and potential unrest.

The "basic structure doctrine", championed by the Supreme Court, also aims to protect core democratic principles from erosion. This is, however, limited and the Supreme Court has the option to revise its definition from time to time. Article 7B recognises the doctrine but ironically exaggerates it by making even peripheral provisions, such as the status of Dhaka as our capital, unamendable. We already know that the judicially enumerated basic structure doctrine itself lacks a clear definition, potentially allowing the judges to interpret it subjectively. Therefore, elevating this judicial doctrine to the status of an unalterable constitutional principle through Article 7B risks perpetuating the very flaws of the doctrine itself.

Article 7B has a self-preservation paradox too. It declares certain provisions, including itself, unalterable. It raises serious questions about its validity. Was Article 7B or the Fifteenth Amendment as a whole, made by a Constitutional Assembly in the exercise of its original constituent power? Clearly not. Was it an act of a parliament exercising its derivative power of amendment? Perhaps yes. Since Article 7B was not part or basic structure of the original 1972 Constitution, Parliament should be able to use its amendment power to amend it.


Article 7B's self-entrenchment has a logic paradox as well. The "immutable Constitution" it seeks to establish is achieved through the very amendment process it restricts. Imagine a locked box with a note inside saying, "This box can never be opened." However, the note was placed by opening the box, and the instruction is to be seen upon opening the box. Similarly, Article 7B relied on the amendment process to become unamendable.

The self-preservation may set a dangerous precedent. Future regimes could exploit this logic to shield their amendments from scrutiny and hinder the Constitution's ability to adapt to unforeseen challenges. In this regard, it is worth recalling Justice A. B. M. Khairul Hoque's opinion regarding the referendum clause of the Fifth Amendment. Justice Hoque called it "a sheer hierocracy" that Ziaur Rahman amended the four pillars of the Constitution as per his sweet will and eventually made it impossible for Parliament to amend the new principles without seeking a referendum. Justice Hoque declared the referendum clause unconstitutional on the grounds of this hierocracy. Could the same logic apply to Article 7B? Article 7B seems to have a similar legitimacy crisis as did Zia's referendum clause.

In conclusion, Article 7B presents a complex challenge for Bangladesh's democracy. Bangladesh's aspiration for a democratic future necessitates a Constitution that can adapt to the needs of its evolving citizenry. While Article 7B's intent to safeguard our core constitutional principles is commendable, its rigid formulation undermines popular sovereignty and democratic evolution. While courts typically avoid questioning internal parliamentary proceedings, Bangladesh's Supreme Court would perhaps need a more nuanced approach, if the Article 7B is ever questioned there. We must balance legal principles with democratic ideals, potentially exploring the role of judicial review in ensuring a fair and inclusive amendment process.

The writers are Assistant Professor and Chair in the Department of Law at Z. H. Sikder University of Science and Technology, Bangladesh, and Lecturer in Law, Faculty of Business, Law and Politics at the University of Hull, United Kingdom, respectively.

Saturday, May 11, 2024





Dr M Jashim Ali Chowdhury

in: Ngoc Son Bui and Mara Malagodi (eds), Asian Comparative Constitutional Law Volume II: Constitutional Amendments (Hart Publishing 2024) 367-388

Publisher's Link:

https://www.bloomsbury.com/uk/asian-comparative-constitutional-law-volume-2-9781509949748/




Abstract

This chapter considers Bangladesh’s constitutional amendment rules, politics and debates. It evaluates the history, nature and impact of Bangladeshi amendments from a functionalist perspective developed by Ngoc Son Bui – one of the two editors of this volume (Asian Comparative Constitutional Law Volume 2: Constitutional Amendments). Bui argues that a mere rule-based and theoretical perception of constitutional amendments might not tell the whole story of amendment realities. He rather offers a ‘functional’ approach which would focus on the contexts – regional, regime and historical – in which the amendment politics roll out, the actual functions the amendments discharge in the body politic and the factors that influence the amendment choices made by the political actors. This chapter argues that Bui’s framework constitutes a suitable model for appreciating the Bangladeshi constitutional amendments within the broader lens of Asian constitutionalism.







Thursday, May 9, 2024

Religious Equality and Secularism in India:

A Critical Review of the Ayodhya-Babri Mosque Judgment


Dr M Jashim Ali Chowdhury*

Jubaer Ahmed**

Dr Md. Abdullah Al Mamun***


The Chittagong University Journal of Law Vol 25 (2020) Published in April 2024, pp 75-96.

For the full text please visit: 

https://www.academia.edu/118808781/Religious_Equality_and_Secularism_in_India_A_Critical_Review_of_Ayodhya_Babri_Mosque_Judgement 

Abstract

In the 1950s, India’s founding fathers spent considerable time secularising its national identity. Later in 1976, a constitutional amendment placed ‘Secularism’ in the Preamble of the Indian Constitution. The Indian Supreme Court showed a strong reverence for Secularism from the 1970s to early 1990s. However, the post-1995 Supreme Court got swayed away by the rise of extremist Hindu nationalism, craftily limited the ambit of Secularism, and endorsed an alternative definition of religious tolerance based on the teachings of ancient Hindu texts. We argue that while the mid-1990s’ Hindutva judgments of the Indian Supreme Court have permanently damaged the face of Indian Secularism, the later decisions of the Court, including the recent Ayodhya-Babri Mosque judgement, show an unprecedented disregard for constitutional equality for India’s religious minorities, particularly the Muslims. This critical evaluation of the Ayodhya Babri Mosque Judgment shows that almost all of the legal and historical arguments offered by the Indian Supreme Court there are either wrong or deeply flawed. The paradigm shift in Indian Supreme Court’s jurisprudential commitment to secularism and religious equality could only encourage more anti-minority onslaught in the days ahead.





Friday, March 15, 2024




ল'ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ
সাক্ষাৎকার / মতামত ১০ মার্চ, ২০২৪


ড. এম জসিম আলী চৌধুরী
প্রভাষক, আইন বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব হল, যুক্তরাজ্য।
ই-মেইল: j.chowdhury@hull.ac.uk





ভূমিকা

২০১৪ সালে বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেন এবং বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী-কে স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ না দেয়াকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলায় আপিল বিভাগের পূর্ণ রায় কয়েক দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। মামলাটির আদেশ হয়েছিলো ২০২৩ এর জুনে। পূর্ণ রায় এসেছে গত ২৮ ফেব্রয়ারি ২০২৪ (https://www.supremecourt.gov.bd/resources/documents/1099382_CA_NO-232_of_2014_Altaf_Hossain_Farid_Ahmed_Shibli.pdf)

রায়ের চূড়ান্ত আদেশের (বি) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে বিচারক নিয়োগ নিয়ে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মতের পার্থক্য হলে কোন এক পক্ষের মতামত প্রাধান্য পাবে না। মহামান্য আপিল বিভাগের আদেশে আরো বলা হয়েছে, এ ধরণের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির কাছে ব্যাপারটা দ্বিতীয়বার পাঠানো হবে। দ্বিতীয়বারে প্রধান বিচারপতি যা বলবেন সেটি যথাযথ বিবেচনা করা হবে বলে আদালত আশা করেন (চূড়ান্ত আদেশের (ই) অনুচ্ছেদ)। এ প্রস্তাবনাটি কৌতহল উদ্দীপক। কারণ এটি উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ সম্পর্কে আমাদের (ভারত এবং পাকিস্তানেরও) সর্বোচ্চ আদালতের গত বিশ-ত্রিশ বছরের রায়ের ধারার বিপরীত।

এই বিশ-ত্রিশ বছরে ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতকে আমরা বিচারক নিয়োগ প্রশ্নে প্রধান বিচারপতির মতের প্রাধান্যের বাইরে কিছুই মেনে নিতে দেখিনি। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ আদালতগুলো এটাকেই সংবিধান, সংবিধানের ব্যাসিক স্ট্রাকচার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার একমাত্র গ্যারান্টি বলে এসেছেন এবং বলে চলেছেন। এটি নিয়ে উপমহাদেশের আইনের অধ্যাপকদের অনেকেই চাঁছাছোলা সমালোচনা করে থাকেন।

এই মামলার বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে বাদ দেয়া দুই বিচারপতি নিয়োগের যোগ্যতার পূর্বশর্ত (যেমন, ১০ বছর হাইকোর্ট প্রাকটিস) পূরণ করেন নি বলে যুক্তি এসেছিল। আপিল বিভাগও সংশ্লিষ্ট বিচারকদের এন্টিসিডেন্ট বা যোগ্যতার শর্ত পুরনের প্রশ্নে মতবিরোধ নিয়ে বলেছেন। জুডিশিয়াল একুমেন (বিজ্ঞতা) নিয়ে মতবিরোধের কথা বলেন নি। সুতরাং একটা ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ থাকে যে, জুডিশিয়াল একুমেন প্রশ্নে বাংলাদেশের আপিল বিভাগ হয়ত এখনো আগের মতোই প্রধান বিচারপতির মতামতের প্রাধান্যের অবস্থানে আছেন।



দুটি বিনীত সমালোচনা

একাডেমিক বিবেচনায় আমি (এবং আমার মতো আরো অনেকেই) বিচারক নিয়োগে প্রধান বিচারপতি ও উনার কলিজিয়ামের একচ্ছত্র আধিপত্য ও শেষ কথা বলার অধিকারের পক্ষে নই। সেদিক থেকে এ রায়টা অনেকেরই সমর্থন পাওয়ার কথা। কিন্তু একটা ভালো রায় লেখার মতো বিশদ গবেষণাধর্মী ও শ্রমসাধ্য কাজের পেছনে মাননীয় বিচারপতিদের যে ধরণের গভীর ও মানসম্মত গবেষণা সহায়তা পাওয়ার কথা সে ধরণের সহায়তা তাঁরা এ মামলার ক্ষেত্রে পান নি বলেই আমার মনে হয়েছে। মহামান্য আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের রায়ের কয়েকটি জায়গা থেকে দুটি উদাহরণ দিচ্ছি।
১.

মতামতের প্রাধান্যের প্রশ্নে মাননীয় বিচারপতি (বর্তমানে বাংলাদেশের মহামান্য প্রধান বিচারপতি) ওবায়দুল হাসানের সিদ্ধান্তটি অনেকটাই ভারতীয় এস পি গুপ্তা মামলার রায়ের উপর ভিত্তি করে নেয়া (পূর্ণ রায়ের ৫২-৫৭ পৃষ্ঠা দেখুন) বলে প্রতীয়মান হয়। ১৯৮২ সালের এ রায়ে ভারতীয় বিচারপতি ভগবতির মূল কথা ছিলো, বিচারক নিয়োগের সুপারিশ প্রশ্নে প্রধান বিচারপতির মত গুরুত্বপূর্ণ তবে শেষ কথা নয়। রায়টি তৎকালীন ভারত সরকারের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে মাত্র ৪-৩ মেজরিটিতে দেয়া হয়েছিল। পরে ১৯৯৩ সালে সেকেন্ড জাজেস কেইস (Supreme Court Advocates-on-Record Association v Union of India (1993) 4 SCC 441) এর বিচারপতিরা এস পি গুপ্তার রায়টি বাতিল করে দেন।

তখন বলা হয়, প্রধান বিচারপতির সুপারিশ মানা বাধ্যতামূলক। পরে থার্ড জাজেস কেইস (Re Special Reference No 1 of 1998 (1998) 7 SCC 739) এ আবারো বলা হয় প্রধান বিচারপতি ও উনার কলিজিয়ামের সুপারিশ মানা বাধ্যতামূলক। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ভারতীয় বিচারক নিয়োগ কমিশন মামলায় (Supreme Court Advocates-on-Record Association v. Union of India (2016) 5 SCC 1) এ কথাটা আবারো একেবারে বেদ বাক্যের মত করে বলা হয়।

একই কাজ পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট করেছেন ১৯৯৬ সালের আল জিহাদ ট্রাস্ট, ২০১০ সালের নাদিম আহমেদ (১৮ তম সংশোধনী) ও ২০১১ সালের মুনির হোসেন ভাট্টি (১৯ তম সংশোধনী) মামলায়। আমাদের মাহামান্য আপিল বিভাগও এ কাজ করেছেন মাসদার হোসেন ও ১৬তম সংশোধনী (Advocate Asaduzzaman Siddiqui v. Bangladesh10 ALR (AD) 03) মামলা সহ আরো অনেক মামলায়।

এখন এতগুলো ধারাবাহিক রায়ের বিপরীতে কথা বলতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ওই রায়গুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করে ওগুলোকে খণ্ডন করেই বলতে হবে। আমাদের বলতে হবে ওই মামলাগুলোর প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা কেন এখানে নেই। আমাদের আরো বলতে হবে কেন আমরা এস পি গুপ্তার কাছেই ফিরে যাবো। ওই মামলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (যেটি আগে বলেছি) এবং ঘটনা (বিচারকের বদলি)-র বিবেচনায় কারো কারো কাছে এস পি গুপ্তা মামলাটি এ মামলার জন্য কিছুটা দূরবর্তী মনে হতে পারে। কিন্তু মহামান্য আদালতের গবেষণা সহায়তায় যারা ছিলেন তাঁরা এ ব্যাপারটি উপেক্ষা করেছেন বলেই মনে হয়েছে। এমতাবস্থায় এস পি গুপ্তা-র বাতিল হয়ে যাওয়া রায়টি থেকে দেয়া পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠার রেফারেন্স আমাদের মহামান্য আপিল বিভাগের যুগান্তকরি এ রায়টির যুক্তির আবদেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
২.

মহামান্য আদালতের রায়ের একটি অংশে (৭১-৭৪ পৃষ্ঠা দেখুন) মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদালতের কাছে জবাবদিহিতা না করার ব্যাপারটি কিছুটা আক্ষরিক অর্থে পাঠ করা হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হতে পারে। বিশেষত রায়ের ৭৪ পৃষ্ঠায় সংবিধানের ৪৮(৩) ও ৫১ অনুচ্ছেদ মিলিয়ে আদালতের কাছে মহামান্য রাষ্ট্রপতির জবাব দিতে না হওয়ার ব্যাপারটি যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেটি আমাদের উচ্চ আদালতের পূর্বতন রায়গুলোর সাথে কিছুটা সাংঘর্ষিক। যেমন, ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ প্রসঙ্গে ১০ অতিরিক্ত বিচারপতিদের একটি মামলাতেই (Govt. of Bangladesh v. M. Shamsul Huda & ors 60 DLR (AD) 124) সরকার দাবি করেছিলো রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী কি পরামর্শ দেন সেটি আদালত দেখতে চাইতে পারেন না। মহামান্য আপিল বিভাগ মানেন নি। বরং বলেছেন রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী কি পরামর্শ দিয়েছেন সেটি দেখতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী যে দলিলের ভিত্তিতে পরামর্শ দিয়েছেন সেটি আমরা দেখতে চাইতে পারি (ওই মামলার প্যারাগ্রাফ ১৯)।

একইভাবে ৫১ অনুচ্ছেদ নিয়েও আদালতের ঐতিহাসিক অবস্থান এ রায়ের কিছুটা বিপরীত। উচ্চ আদালত খন্দকার মোশতাক ও হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত কার্যকলাপ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা কিছু মামলায় রাষ্ট্রপতির ইমিউনিটিকে সীমিত করে দেখেছেন, শর্তহীন বলেন নি। তাছাড়া আদালত ঐতিহাসিকভাবেই রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা ও বিবেচনাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। ১৯৯০ এর দশক থেকে আমরা জেনে এসেছি, আমাদের আদালত এ সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সাবজেকটিভ সেটিস্পেকশনের দাবি মানেন না। সবসময়ই অবজেক্টিভ সেটিস্পেকশনের পক্ষে অবস্থান নেন। এটি আমাদের একটি প্রতিষ্ঠিত ডকট্রিন। এমন কি ২০০৭-২০০৮ সালের জরুরি অবস্থার শেষের দিকে তখনকার অত্যন্ত ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদের জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষমতা চর্চাকে আদালত অবলীলায় প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। বিশেষত ওই সময়ের বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তাঁর বিভিন্ন রায়গুলোতে বাংলদেশ একচেটিয়া রাষ্ট্রপতিতন্ত্র নয় বলেই মত দেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার সীমিত পাঠ সংসদীয় গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক জবাবদিহিতারও দাবি।

মাননীয় প্রধান বিচারপতি-র রায়টিতে কিছুটা অস্বস্তিকর আরেকটি ব্যাপার হলো সংবিধানিক আইনের উপর প্রতিষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ নন এমন একজন একেবারে অখ্যাত নবীন ছাত্রের একটি অখ্যাত ওয়েবসাইটে দেয়া ব্লগ পোষ্টকে রায়ের চার্ পৃষ্ঠা জুড়ে উল্লেখ করা (পূর্ণ রায়ের ৫৮-৬২ পৃষ্ঠা দেখুন)। স্পষ্টতই http://www.mazellaws.com নামের ওই ওয়েবসাইটটি কোন একাডেমিক পিয়ার রিভিউ করা মানসম্পন্ন জার্নাল প্রকাশ করে না। এটি একটি সাধারণ তথ্যভান্ডার যেটি পরিচালনা করেন “a group of enthusiastic individuals who want to voice their opinions and channel their inner intellect on a plethora of matters”. খুব সম্ভবত মহামান্য আদালতের গবেষণা দলের অসতর্কতায় আলোচ্য ব্লগটি প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়েছে , “Recently an Article has been published in a foreign law journal namely, ‘Mazellaws Digest’” (পূর্ণ রায়ের ৫৮-৬২ পৃষ্ঠা দেখুন)।

এটি একটি অতি সাধারণ কোন ধরণের রেফারেন্সবিহীন ব্লগ পোষ্ট হলেও, যেহেতু আদালতের রায়ে এসেছে সেহেতু আমি লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। সাংবিধানিক আইনে আলোচ্য লেখকের বোঝাপড়া একেবারে ন্যূনতম পর্যায়ের বলেই প্রতীয়মান হয় যখন তিনি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে প্রায় জবাবদিহিতার উর্ধে প্রমাণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতির বিচারক নিয়োগের দাফতরিক কাজের সাথে অসদাচরণের দায়ে সংসদ কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়াকে গুলিয়ে ফেলেন। সংবিধানের ৫২(২) অনুচ্ছেদের দোহাই দিয়ে উক্ত লেখক দাবি করেন, রাষ্ট্রপতির কোন আচরণ আদালতের কাছে বা ও অন্য কোথাও রেফার করার ক্ষমতা কেবলমাত্র সংসদের। সন্দেহ নেই, এ যুক্তিটি একেবারে বালখিল্যতাপূর্ণ এবং সারবত্তাহীন। ৫২ অনুচ্ছেদ মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাক্তিগত আচরণজনিত কারণে সৃষ্ট সংসদীয় অভিশংসন প্রক্রিয়া। এখন এই নবীন লেখক যদি বলতে চান, কেবল মাত্র ৫২ অনুচ্ছেদের সংসদীয় অভিসংশন প্রক্রিয়ায় ছাড়া মহামান্য রাষ্ট্রপতির আর কোন কিছুই কেউ আদালতের প্রেরণ করতে পারবেন না, তাহলে রাষ্ট্র বা সরকারের কোন কাজই বা রষ্ট্রপতির কোন বিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্তই আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। কারণ সংবিধানের ৫৫(৪) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রের সব কাজই রাষ্ট্রপতির নামে এবং অনুমোদনে করতে হয়। বিচারক নিয়োগের প্রশ্নে বা অধ্যাদেশ জারির প্রশ্নে বা যে কোন সাংবিধানিক ও দাফতরিক কাজ ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক রাষ্ট্ৰপতির (প্ৰকৃতপক্ষে সরকারের তথা রাষ্ট্রের) বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রাখেন। সংবিধানের ৪৪ ও ১০২ অনুচ্ছেদের মূল কথা এটা।

অন্যদিকে ৫১ অনুচ্ছেদ মহামান্য রাষ্ট্রপতি-র বাক্তিগত দায়মুক্তি প্রসঙ্গে। এটি উনার দাফতরিক জবাবদিহিতা থেকে দায়মুক্তি নয়। ৫২ অনুচ্ছেদ মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাক্তিগত আচরণজনিত কারণে সৃষ্ঠ সংসদীয় অভিশংসন প্রক্রিয়া। এগুলোর সাথে রাষ্ট্রের দাফতরিক কাজকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে করা রিট মামলাকে গুলিয়ে ফেলা যায় না। তাছাড়া ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ নিয়ে মহামান্য আপিল বিভাগের আরেকটি বিপরীতধর্মী রায় আমি আগের প্যারাফগ্রাফেই উল্লেখ করেছি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, State v. Abdul Khaleque 49 DLR (AD) (1997) 154 মামলায় মহামান্য আপিল বিভাগ অখ্যাত প্রকাশনার অখ্যাত লেখকের ছোট একটি বই রেফারেন্স হিসেবে গ্রহন করতে অস্বীকার করেন এই বলে যে, “It is a tiny booklet perhaps meant for busy trial lawyers dealing with various subjects relating to criminal trial gandoisely dedicated to “New Swimmers of Occans of Law.”

সবশেষে উল্লেখ্য যে, এস পি গুপ্ত মামলা ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা-র বিচারিক নিরীক্ষা প্রসঙ্গে এই মূল্যায়নের বক্তব্যগুলোর জোরালো সমর্থন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন এবং বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এর রায়ে পাওয়া যায় (পূর্ণ রায়ের ৯৫, ৯৯ এবং ১০১-১০৮ পৃষ্ঠা দেখুন) ।



রায়ের সুদূর প্রসারী সম্ভাবনা

রায়টি পুরো পড়ে আমার মনে হয়েছে এটি আসলে ১০ অতিরিক্ত বিচারপতির মামলায় (Bangladesh & Justice Syed Dastagir Hossain v. Idrisur Rahman 15 BLC (AD) 49) এন্টিসিডেন্ট বা যোগ্যতার শর্ত পূরণের প্রশ্ন এবং জুডিশিয়াল একুমেন (বিজ্ঞতা) এর প্রশ্নে যে পার্থক্য করা হয়েছে তার উপর। আমার জানামতে ওই মামলায় ১০ বিচারপতির যোগ্যতার শর্ত নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠে নি। প্রকৃতপক্ষে ওই সময় চার্ দলীয় জোট সরকার আদালতকে বলেননি তারা কি বিবেচনায় ১০ বিচারপতিকে বাদ দিয়েছিলেন। ফলে সুপ্রিম কোর্টকে বলতে হয়েছে বিবেচনা জুডিশিয়াল একুমেন হলে প্রধান বিচারপতির মতামত প্রাধান্য পাবে (ডোমিনেন্ট হবে)। বিবেচনা চাকুরীর যোগ্যতার শর্ত পূরণ হলে হয়তো প্রধান বিচারপতির মতামত ডরমেন্ট হবে। এটি ছিলো একটি দৃশ্যকল্প। ওই মামলার ঘটনা নয়। এবারে এটি মামলার ঘটনা। সুতরাং মহামান্য প্রধান বিচারপতির রায়ের একটি অংশে যথাযথভাবেই (৬৩-৬৮ পৃষ্ঠা দেখুন) এটির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। মাননীয় বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান এর রায়েও আমরা এর দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত কিছু ইঙ্গিত পেয়েছি (রায়ের ১৬-১৭ পৃষ্ঠা দেখুন)। রায়ের অন্যান্য অংশেও এটি ভালোভাবে এসেছে। আমার মনে হয় এ মামলার জুরিসপ্রুডেনসিয়াল কন্ট্রিবিউশন এখানে এবং এ অংশটুকু ভবিষ্যতে অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় আদালতগুলোকে পথ দেখলে অবাক হবো না। আমি অদূর ভবিষ্যতে এ ধারণাটি নিয়ে আরো গবেষণা করতে চাই।

(ঋণ স্বীকার: সম্প্রতি প্রকাশিত রায়টি আমার নজরে আনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী মোকাররামুছ সাকলানের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। রায়ের শ্রদ্ধাপূর্ণ একাডেমিক সমালোচনা ও অন্যান্য মতামত একান্তই আমার।)

‘বদলে না যাওয়া’ বাংলাদেশ ড. এম জসিম আলী চৌধুরী প্রভাষক, ইউনিভার্সিটি অব হাল, যুক্তরাজ্য লেখাঃ ১৩ জুন ২০২৪ প্রকাশঃ দৈনিক আজকের পত্রিকা (৩ সেপ...