Thursday, December 28, 2017


বিচারক অপসারণ বিতর্কে সমাধান সুত্র


এম. জসিম আলী চৌধুরী
দৈনিক সমকাল, "মুক্তমঞ্চ", ১৮ জুলাই ২০১৭  

(আজকের দৈনিক সমকালের "মুক্তমঞ্চ" পাতায় প্রকাশিত। স্থান সংকুলানের স্বার্থে লেখাটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দিতে হওয়ায় এখানে আমার মূল লেখাটি সহ সমকালের লিংক তুলে দিচ্ছিঃ http://bangla.samakal.net/2017/07/18/309015)


উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ প্রশ্নে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেয়া সর্বসম্মত রায়টি জনমনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সচেতন মহলেও এটি এক ধরণের অবচেতন সন্তুষ্টি (complacency) সৃষ্টি করতে পেরেছে। বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক ইতিহাসের সাদামাটা মূল্যায়ন করতে গেলেও দেখা যাবে প্রায়শই সরকারী দলের একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ভরপুর জাতীয় সংসদ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানুষের কাঙ্ক্ষিত শ্রদ্ধা ও আস্থা অর্জন করতে পারেন নি। এর পেছনে সংসদ সদস্য হিসেবে অতীতে দায়িত্ব পালন করেছেন, বর্তমানে করছেন এবং নিকট ভবিষ্যতে করতে পারেন এমন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা, চিন্তা, কর্ম এবং সুনামের সংকটই মুলত দায়ী। অতএব, আপিল বিভাগের রায়ের পর সংবিধানের জটিল মার-প্যাঁচ না জানা সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইনজ্ঞ মহলের বিশাল একটি অংশও স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছেন। সংবিধানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে অবশ্য ষোল সংশোধনীর আলোচনা অনকেটাই বৈপরীত্যে ভরপুর। বৈপরীত্যের কথা বলতে গিয়েও স্বস্থি নেই। শ্রোতারা অনেকেই আমাদের "তাত্ত্বিক" বলছেন এবং "বাস্তবতা" উপলব্ধি করার ব্যর্থতার অভিযোগ আনছেন। এ নিবন্ধে "তাত্ত্বিক" বৈপরীত্যগুলো সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। তবে বাস্তবতার প্রশ্ন দিয়েই আলোচনা শুরু করতে চাই।
বিচার বিভাগের অবস্থানের মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তিঃ
মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায় এবং আপীল বিভাগে মামলার শুনানির ধারা পর্যালোচনা করে আমার মনে হয়েছে, ষোল তম সংশোধনী নিয়ে বিচার বিভাগের অবস্থানের পেছনে দুটি সুনির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক কারণ অন্য যে কোন ধরণের সাংবিধানিক এবং আইনি যুক্তিবোধের উপরে স্থান পেয়েছে। প্রথম কারণটি আগেই বলেছি - প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংসদ ও ব্যক্তি হিসেবে সংসদ সদস্যের ব্যাপারে বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী এবং বিচারকদের আস্থাশীল হতে না পারা। দ্বিতীয় কারণটি অবশ্য জনগণের সামনে খুব বেশি আসে নি। সেটি হচ্ছে বিচারক অপসারণের আগের ব্যবস্থা (জুডিশিয়াল কাউন্সিল)-টিতে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারকদের একটি সুনিশ্চিত (guaranteed) ও গতি নির্ধারক (decisive) অংশগ্রহণ ছিল, যেটি ১৬-তম সংশোধনীর মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা মূল ব্যবস্থা (সংসদীয় অপসারণ)-টিতে নিশ্চিত নয়। বিচারক অপসারণ প্রক্রিয়ায় জ্যৈষ্ঠ বিচারকদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়াটা উচ্চ আদালতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সুপ্রিম কোর্টের এ মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান আমরা আগেই দেখতে পেয়েছি। পঞ্চম সংশোধনী মামলা (15 MLR (AD) 249)-য় সামরিক শাসক মেজর জিয়ার প্রায় সব সংশোধনী বাতিল করে দেয়া হলেও বিচারক অপসারণের জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থাটি রেখে দেয়া হয়। বিস্তারিত যুক্তি তর্কে না গিয়ে আপিল বিভাগ শুধু বলেছিলেন পরিবর্তিত ব্যবস্থাটি আগের ব্যবস্থার চেয়ে অধিকতর স্বচ্ছ (more transparent) এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার স্বপক্ষে (safeguarding independence of judiciary) (পূর্ণাঙ্গ রায়ের ১৭৭ দেখুন)। এরকম এক লাইনের ব্যাখ্যা দিয়ে মূল সংবিধানের একটি গুরত্বপূর্ণ পরিবর্তনকে মেনে নেয়ার সমালোচনা তখন অনেকেই করেছিলেন। তবে ১৬-তম সংশোধনী মামলার রায়ে আদালত তাঁর আগের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বিস্তারিত ব্যাখা দেয়ার সুযোগও পেয়েছেন। দেখার বিষয় হচ্ছে, এবারের বিস্তারিত ব্যাখ্যা কতটুকু যুক্তিনির্ভর আর কতটুকু ধারণা (perception) নির্ভর। কারণ সাংবিধানিক মামলার বিচারে ধারণা ও যুক্তি-র ফারাক করা খুব জরুরী।
সংসদীয় অপসারণ ব্যবস্থা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে বলে মহামান্য আদালত এবং সম্মানিত এমিকাস কিউরিরা "মনে করলেই" ব্যবস্থাটি অসাংবিধানিক হয়ে যাবে না। দেখতে হবে সংবিধানে যে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে সে সব প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ও ভারসাম্য রক্ষার প্রক্রিয়ায় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অনির্বাচিত বিচারকদের নিয়োগ ও অপসারণে "সাংবিধানিকভাবে অংশ নিতে পারেন কি না"। মহামান্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত না হওয়ায় আমি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ভিত্তিতেই ব্যাপারটি মূল্যায়ন করতে চাই। সুবিধা হচ্ছে, সম্মানিত এমিকাস কিউরি এবং পক্ষ বিপক্ষের আইনজীবীরা উভয় আদালতে মোটামুটি একই বক্তব্য দিয়েছেন এবং আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় সমর্থন করেছেন। মাননীয় এটর্নি জেনারেলের একটি নতুন যুক্তি ছাড়া আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের শুনানি মোটামুটি একই রকম।
সাংবিধানিক মামলার বিচারে জনমতের প্রভাবঃ
হাইকোর্ট বিভাগে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের আগাগোড়া পড়লে দেখা যায় মহামান্য আদালত এবং বিজ্ঞ এমিকাস কিউরিদের যুক্তি-তর্কের সিংহভাগ জুড়ে ১৬তম সংশোধনীর পেছনে রাজনৈতিক সরকারের (অসৎ) উদ্দেশ্য এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণেèর ব্যাপারে সাধারণ মানুষের অনুভূতি-ই প্রাধান্য পেয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, ১৬তম সংশোধনী যদি জনগণের দৃষ্টিতে (in public perception) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণè করে তাহলে আদালত তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন (হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ১৩৯ পৃষ্টা দেখুন)। সংবিধান বিশারদ Geoffrey Rivlin তাঁর Understanding the Law (Oxford, Sixth Edition (2012)) বইয়ের ৮৪ পৃষ্ঠায় আইনের আদালতে এ ধরণের জনগণ তাড়িত বিচার (justice by plebiscite)-কে পরিতাজ্য বলেছেন। গণতন্ত্রে জনগণের মর্জি বুঝে চলার দায় জনপ্রতিনিধিদেও, বিচারকদের নয়। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার করা পঞ্চম সংশোধনীর ব্যাপারে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা জিয়ার জনসমর্থনের যুক্তি তুলে ধরলে বিচারপতি খায়রুল হক তাঁর রায়ের ২০৪ পৃষ্ঠায় বলেছিলেন, "আদালত গণভোটের ভিত্তিতে বিচার করেন না, আইনের ভিত্তিতে করেন" (2006 (Special Issue) BLT (HCD))। সম্ভবত একই কারণে জেনারেল এরশাদের করা হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের সংশোধনীটি জনপ্রিয় হওয়া সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক বলে রায় দেন। এখন নৈতিক প্রশ্ন হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট বিকেন্দ্রিকরণের প্রশ্নে জনবিমুখী অবস্থান নেয়া বিচার বিভাগ আবার বিচারকদের চাকুরীর শর্ত স¤পর্কিত প্রশ্নে জনমতের আশ্রয় নিতে পারেন কিনা। আমরা বিশ্বাস করি, সংবিধান সংশোধনীর মত তাৎপর্যপূর্ণ একটি আইনকে অবৈধ বলতে হলে শুধুমাত্র সাংবিধানিক ও আইনি যুক্তির উপর দাড়িয়েই বলতে হবে, জনমত বা অন্যকোন কিছুর ভিত্তিতে নয়।
সাংবিধানিক মামলার বিচারে ধারণা ও যুক্তির ফারাকঃ
এ মামলার আরেকটি লক্ষ্যণীয় দিক হচ্ছে, আবেদনকারী আইনজীবী এবং বিশেষ করে সম্মানিত এমিকাস কিউরিরা ১৬তম সংশোধনী কায়েম হলে অদূর ভবিষ্যতে সংসদ ও সংসদ সদস্যদের সম্ভাব্য আচরণ কেমন হতে পারে তার ব্যাখ্যা দিতেই প্রায় পুরো সময় পার করেছেন। পত্র-পত্রিকা মারফত আপিল বিভাগে সিনিয়র আইনজীবীদের যে বক্তব্য পেয়েছি তার প্রায় পুরোটাকেই আমার আইনি যুক্তিতর্কের বদলে জনসমাবেশের বক্তৃতা বলে মনে হয়েছে। সিনিয়র আইনজীবী এবং মহামান্য বিচারকরা বলতে চেয়েছেন - সংসদ সদস্যদের ৭০ ভাগ ব্যবসায়ী, তাঁরা তাদের সংসদীয় কাজে মনোযোগী নন (হাইকোর্টের রায়ের ৪৫ পৃষ্টা), আইন প্রণয়নে তাঁদের দক্ষতা নিচু মানের (হাইকোর্টের রায়ের ১৪৬ পৃষ্টা), তাঁদের অনেকেরই ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড আছে (হাইকোর্টের রায়ের ৫০ পৃষ্টা) এবং ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে তাঁরা স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম (হাইকোর্টের রায়ের ৪৯ পৃষ্টা), ইত্যাদি। সন্দেহ নেই, জনমানসে এ ধরণের যুক্তি বেশ আকর্ষণীয় এবং জনপ্রিয় হবে। কিন্তু সমস্যা হল আইনের আদালতে আইনের বিচার কেবলমাত্র আইনের মাপকাঠিতেই হতে পারে, জনপ্রিয় ধ্যান-ধারণা (populist dogma)- র ভিত্তিতে নয়। তাছাড়া এ ধরণের জনপ্রিয় যুক্তি আমাদের সমাজের প্রায় সবক্ষেত্রেই খাটবে। আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রচুর নিম্মমানের ও নিচু নৈতিকতার শিক্ষক আছেন। আমাদের প্রশাসনে প্রচুর অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা আছেন। অতি নিম্মমানের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবীরাও আমাদের সমাজে আছেন। অথচ আমরা কেউ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিচারালয়, প্রশাসন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কলকারখানাা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি গণঅনাস্থা জ্ঞাপন করে সেখান থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছি না।
সাংবিধান ব্যাখ্যায় "প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি"র গুরুত্বঃ
অথচ যুক্তির কথা হচ্ছে ১৬তম সংশোধনীর বিচার হবে সাধারণ্যে প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির বদলে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় সংসদের সংবিধানিক ক্ষমতা ও এখতিয়ারের প্রশ্নে। সংসদ সদস্যরা ব্যক্তি হিসেবে কতটুকু ভালো বা কতটুকু মন্দ সেটি এ মামলার বিচার্য হতে পারেনা। সাংবিধানিক আইনের লিটারেচারে আমরা একে "প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গী" বা "প্রাতিষ্ঠানিকতা" (institutionalism) বলি। ক্ষমতার পৃথকীকরণ ও ভারসাম্যনীতির আধুনিক রূপকার হচ্ছেন আমেরিকান সংবিধানের অন্যতম জনক জেমস ম্যাডিসন। ম্যাডিসন তাঁর ফেডারেলিস্ট পেপার ৫১-তে বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্যক্তির উচ্চাবিলাস নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আবার প্রতিষ্ঠানের উচ্চাভিলাষ নিয়ন্ত্রণ করা হবে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের সাংঘর্ষিক অভিলাষের মাধ্যমে (ambition must be checked by counter ambition)।
লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হচ্ছে, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে আবেদনকারী আইনজীবী, বিজ্ঞ সিনিয়র এমিকাস কিউরি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের পুরোটা জুড়েই সংবিধানের একটি অনুচ্ছেদে (২২ অনুচ্ছেদ) বলা ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতিকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। অন্যদিকে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ (মৌলিক নীতিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা ও বিচার বিভাগের অক্ষমতা), তৃতীয় ভাগ (মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে বিচার বিচাগের ক্ষমতা ও সংসদের অক্ষমতা), চতুর্থ ভাগ (সংসদ ও বিচার বিভাগের কাছে নির্বাহী বিভাগের দায়বদ্ধতা), পঞ্চম ভাগ (আইন প্রণয়ন, বাজেট অনুমোদন এবং রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে সংসদের ক্ষমতা) এবং ষষ্ঠ ভাগ (মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে ও আইনের প্রয়োগে বিচার বিচাগের ক্ষমতা)-এর সামগ্রিক পাঠে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পার¯পারিকতার যে কাঠামোগত অবয়ব (structural shape) লক্ষ্যনীয় হয় সেটিকে স¤পূর্ণ অবজ্ঞা করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে বিচার বিচাগের ব্যাপারে সংসদের নাক গলানো (poking of nose) ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘন (হাইকোর্টের রায়ের ৪৫ পৃষ্টা)। সংসদের অভিশংসন বিচারের ক্ষমতাকে বিচারিক কর্ম আখ্যা দিয়ে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী দাবি করে বসেন যে সংবিধান অনুযায়ী সংসদের এ ধরনের বিচারিক কাজ করার সুযোগ নেই। সংসদের কাজ শুধুই আইন প্রণয়ন এবং সংবিধান রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের ভেতর নিশ্চিদ্র পৃথকীকরণ (water tight separation) এর পক্ষে (হাইকোর্টের রায়ের ২৪ পৃষ্টা)! অথচ স্বয়ং মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের ক্ষেত্রেও জাতীয় সংসদ এ ধরণের "বিচারিক কর্ম" স¤পাদন করেন এবং সেটি সংবিধান সম্মতভাবেই। তাছাড়া আইন প্রণয়নের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কোষাগার রক্ষণ এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে সংসদের সরাসরি ভূমিকা ব্রিটিশ সংসদীয় গণতন্ত্রের মূলমন্ত্রও বটে। সন্দেহ নেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাংলাদেশ সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামো। প্রশ্ন আসে, ৭ম অনুচ্ছেদ তথা জনগণের সার্বভৌমত্ব কি সবচেয়ে বড় মৌলিক কাঠামো নয়? সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামোকে অতি গুরুত্ব দিতে গিয়ে অন্যান্য মৌলিক কাঠামোগুলোকে অবজ্ঞা করা এবং এদের মধ্যে ভারসাম্য সাধনের চেষ্টাকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে ব্যাখ্যা করা সংবিধান ব্যাখ্যার সঠিক পদ্ধতি বলে বিবেচিত হতে পারে না। দুঃখজনকভাবে, ১৬তম সংশোধনী মামলার কোন এমিকাস কিউরি ক্ষমতার ভারসাম্য নীতিকে বিবেচনায়ই ধরেন নি। শ্রদ্ধেয় ডঃ কামাল হোসেন স্যার সহ প্রায় সব এমিকাস কিউরি বিচারকদের অভিশংসন প্রক্রিয়ায় সংসদের প্রস্তাবিত অংশগ্রহণকে ভারসাম্য (check and balance) হিসেবে না ধরে হস্তক্ষেপ (interference) হিসেবে দেখিয়েছেন (হাইকোর্টের রায়ের ৩৯ পৃষ্টা)। মাননীয় এটর্নি জেনারেল ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও সেটি কেঊ গায়ে মাখেন নি (হাইকোর্টের রায়ের ২৮ পৃষ্টা)।
অথচ সংবিধানের ৯৫(২) অনুচ্ছেদ দেখলে দেখা যাবে বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের। এ কথা সত্যি যে সংসদ এখনো আইন করেন নি বলে ক্ষমতাটি নির্বাহী বিভাগ প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শক্রমে চর্চা করছে। কিন্তু সংসদ আজই আইন প্রণয়ন করে বলতে পারেন, প্রধান মন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে বঙ্গভবন কর্তৃক মনোনীত বিচারকদের সংসদের অনুমোদন (confirmation) সাপেক্ষে চূড়ান্ত নিয়োগ দিতে হবে। সংসদ তেমন একটি আইন করলে সেটি ৯৫ (নিয়মিত বিচারক) এবং ৯৮ (অতিরিক্ত বিচারক) অনুচ্ছেদের কোন কিছুর সাথেই সাংঘর্ষিক হবে না। প্রশ্ন আসে সংসদ যদি সাংবিধানিকভাবেই বিচারক নিয়োগে অংশগ্রহণ করতে পারে তাহলে অপসারণে কেন নয়?
সংবিধানের সামগ্রিক পাঠে আরও একটি ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। সংসদ প্রণীত আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা বিচার বিভাগের। মৌলিক কাঠামো নীতি প্রচলনের পর সংবিধান সংশোধনের বৈধতা যাচাই করার ক্ষমতাও বিচার বিভাগের। আমাদের দৃষ্টিতে এটি ভারসাম্য (check and balance) নীতির প্রয়োগ। অথচ বিচার বিভাগের কোন কিছুতে সংসদের অংশগ্রহণের প্রশ্ন আসলেই আমরা বলছি হস্তক্ষেপ (interference)! মূল সংবিধান কিন্তু যথার্থ অর্থেই বিচার বিভাগকে সংসদের আইনের বৈধতা বিচারের ভার দিয়েছেন আর বিপরীতে সংসদকে বিচারক নিয়োগ এবং অপসারণে ভূমিকা রাখার সুযোগ দিয়েছেন (মূল সংবিধানের ৯৫ ও ৯৬ অনুচ্ছেদ)। বাংলাদেশে ক্ষমতার পৃথকীকরণ আছে, ভারসাম্যও আছে। ভারসাম্য সাধনের কোন চেষ্টাকে হস্তক্ষেপ বলে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। বিশেষত মূল সংবিধানে দেয়া কোন ভারসাম্যমূলক বব্যস্থাকে ঐ সংবিধানেরই মৌলিক কাঠামের পরিপন্থী বলার চেষ্টা যুক্তিসঙ্গত নয়। আপাতত আমরা আপিল বিভাগে এটর্নি জেনারেলের দেয়া এ যুক্তিটি প্রসঙ্গে মহামান্য আপিল বিভাগ কি বলেন সেটি দেখার অপেক্ষায় থাকতে পারি।
প্রিয় পাঠক, এ নিবন্ধের শুরুতে ১৬তম সংশোধনী প্রশ্নে উচ্চ আদালতের অবস্থানের পেছনে দুটি নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক কারণ দেখিয়েছিলাম - এক, প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংসদ এবং ব্যক্তি হিসেবে সাংসদদের ব্যাপারে বিচার বিভাগের আস্থাহীনতা এবং দুই, উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের মত ¯পর্শকাতর প্রক্রিয়ায় সিনিয়র বিচারকদের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা চাওয়া। নিবন্ধের এ অংশে সংবিধানের প্রাতিষ্ঠানিক এবং কাঠামোগত ব্যাখ্যার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছি তাতে ¯পষ্ট হয় যে, উচ্চ আদালতের এ দুটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বাদ দিলে শুধু সংবিধান ও আইনের আশ্রয় নিয়ে এ রায়কে সমর্থন করা আমাদের মত সংবিধানের শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কঠিন।
সংকটের সমাধান সুত্রঃ
প্রশ্ন আসে, ১৬ তম সংশোধনী বহাল রেখেও কি উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারকদের এ দুটি মনস্তাত্ত্বিক অস্বস্তি দূর করা যেত? আমরা বিশ্বাস করি তা করা যেত। দৈনিক পত্রিকার সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে লিখছি বলে খুব বেশী জটিল আইনি বিশ্লেষণে যাচ্ছি না।
প্রথমত, আমার মতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ সদস্যরা দলীয় প্রধানের কাছে জিম্মি থাকাটা এ মামলার মূল সমস্যা নয়। কারণ বর্তমান বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে অপসারণ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি কি করবেন না করবেন তার প্রায় পুরোটাই দলীয় প্রধান (প্রধান মন্ত্রী)-র কাছে জিম্মি। সংসদ সদস্যদের জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ যা রাষ্ট্রপতির জন্য ৪৮(৩) অনুচ্ছেদও তা। দলবদ্ধ সংসদ সদস্যরা বরং একজন মাত্র রাষ্ট্রপতির চেয়ে বেশী স্বাধীন। তারপরও বিচারক অপসারণের প্রক্রিয়াকে অধিকতর স্বচ্ছ করার স্বার্থে এ প্রক্রিয়ার ভোটাভুটির সময় ৭০ অনুচ্ছেদকে সীমিত করার লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করা যেত। বিচারক অপসারনে আইন কমিশনের প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটিতে আমরা সে ধরনের একটি সুযোগ দেখেছি। আমরা বিশ্বাস করি, ১৬ তম সংশোধনীকে অক্ষুণè রেখে উচ্চ আদালত প্রস্তাবিত আইনটির জন্য অপেক্ষা করতে পারতেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণèকারি কিছু দেখলে আইনটিকেই অসাংবিধানিক ঘোষণা করার সুযোগ ছিল। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ অবশ্য অপেক্ষা করতে রাজি হন নি। বলেছেনে বিচারক অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণকারি আইন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই, মূল সংবিধানের এ বব্যস্থাটি নিজেই (in itself) অসাংবিধানিক ((হাইকোর্টের রায়ের ৬৭ পৃষ্টা)।
দ্বিতীয়ত, সংসদীয় অপসারণ প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারকদের নিশ্চিত (guaranteed) ও গতি নির্ধারক (decisive) অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই ছিল এ মামলার মূল সমস্যা। মূল সংবিধান বা ১৬তম সংশোধনীর ৯৬ অনুচ্ছেদের কোথাও বিচারকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে উচ্চ আদালতের সিনিয়র বিচারকদের অংশগ্রহণ বারিত করা হয় নি। ৭০ অনুচ্ছেদের সমস্যার মত অংশগ্রহণের এ সমস্যাটিও আইনের মাধ্যমে সমাধান করা যেত। বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের আইনের মত প্রস্তাবিত অভিযোগ তদন্ত আইনের রূপরেখা চেয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে একটি ১০৬ অনুচ্ছেদের রেফারেন্স পাঠাতে পারতেন। সরকার এবং রাজনৈতিক শক্তির সদিচ্ছা থাকলে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টকে আশ্বস্ত করার অনেক পথই খোলা ছিল। দুঃখের কথা হল, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পার¯পারিক সন্দেহ এবং রাজনৈতিক জেদাজেদির খপ্প্ররে পড়ে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত এবং আইন সভা মুখোমুখি অবস্থানে দাড়িয়ে গেল।

এম জসিম আলী চৌধুরী
দৈনিক সমকাল, মুক্তমঞ্চ,  ১২/০৮/২০১৭

[আজকের (১২/০৮/২০১৭) দৈনিক সমকালের মুক্তমঞ্চ পাতায় প্রকাশিত। পাকিস্তানি সুপ্রিমকোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের পতনে আমরা যারা উদ্বেলিত অথবা উদ্বিগ্ন তাদের জন্য তাদের জন্য আগ্রহ উদ্দীপক হতে পারে। দৈনিক সমকালে স্থান সংকুলানের জন্য কিছুটা পরিমার্জিত হওয়ায়, এখানে আমার মূল লেখাটা তুলে দিচ্ছি। শেষে সমকালের অনলাইন লিংক দেয়া আছে।]


নির্বাচনকালীন দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে আয় গোপন করার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন পাকিস্তানের নওয়াজ শরীফ। পানামা পেপারস নামের একটি বৈশ্বিক সাইবার কেলেঙ্কারিতে ফাঁস হয় নওয়াজ শরিফ অতীতে দুবাই ভিত্তিক একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং সে সুত্রে পাওয়া ১০ হাজার দিরহামের হিসাব তিনি তাঁর নির্বাচনকালীন সম্পদ বিবরণীতে দেননি। ফলে পাকিস্তানী সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সংসদ সদস্য পদে থাকার অযোগ্য ঘোষিত এবং প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন নওয়াজ। এর আগে আরেক ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিও সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার দায়ে দন্ডিত হয়ে পদ হারান। এ নিয়ে পাকিস্তানের ১৮ জন প্রধানমন্ত্রীর কেউই তাঁদের মেয়াদ পূরণ করতে পারেন নি। এর মধ্যে নওয়াজ শরীফ নিজেই তিন-তিন বার পদ হারালেন। প্রধানমন্ত্রীরা পদ হারিয়েছেন হয় রাষ্ট্রপতির নির্দেশ বা বহিস্কারাদেশের মাধ্যমে, নয় রাষ্ট্রপতির সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার ফলে অথবা সরাসরি সেনা অভ্যূত্থানের মাধ্যমে।
জনগণের রায়ে নির্বাচিত সরকার প্রধানের আদালতের রায়ে ক্ষমতা হারানোর ঘটনা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং বিজ্ঞ মহলকে বেশ আলোড়িত করেছে। সাধারণ মানুষের কাছে এটি পাকিস্তানী সুপ্রিম কোর্টের সাহসিকতা ও বিচারিক স্বকীয়তার দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিজ্ঞ মহলের কেউ কেউ অবশ্য এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ইশারা ইঙ্গিত এবং সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা আঁচ করছেন এবং দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার উপর আশু হুমকির আশঙ্কা করছেন। প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে - ১) পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট কি জেনে বুঝে সামরিক বাহিনীর স্বার্থ রক্ষা করছেন? নাকি ২) বিচারিক তৎপরতা (judicial activism)-র অতি প্রয়োগ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই সেনাবাহিনীর স্বার্থ উদ্ধারের গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন?
১.
পৃথিবীর অন্য অনেক সাংবিধানিক ব্যবস্থায় প্রথম প্রশ্নটি বেশ অস্বাভাবিক বিবেচিত হলেও, পাকিস্তানী রাজনীতিতে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের হস্তক্ষেপ এবং এর প্রতি বিচার বিভাগীয় সহনশীলতা (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমর্থন)-র "স্বাভাবিক" ইতিহাস নিঃসন্দেহে এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ করে দেয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি জম্ম নেয়ার পর থেকে হিসেব করলে দেখা যায়, পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত বরাবরই গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অগণতান্ত্রিক শক্তির অনুপ্রবেশ এবং হস্তক্ষেপে সহায়ক শক্তির ভূমিকা নিয়েছেন।
জম্মের মাত্র ছয় বছরের মাথায় পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করেন প্রধান বিচারপতি মুনির। ১৯৫৩ সালের গোঁড়ার দিকে সেনাবাহিনীর ইঙ্গিতে জামাত নেতা আবুল আলা মওদুদি করাচী ও লাহোর জুড়ে কাদিয়ানী দাঙ্গা উস্কে দেন। পুরো মার্চ-এপ্রিল জুড়ে সংগঠিত গণহত্যার দমনের অজুহাতে বেসামরিক সরকারের অনুমিত ছাড়াই মেজর জেনারেল আজম খান রাস্তায় নেমে আসেন। লাহোরে সামরিক আইন জারি করা হয় এবং কোর্ট মার্শালের নামের অনেককেই তাৎক্ষনিক বিচার ও শাস্তি দেয়া হয়। এ রকম একটি বিচারকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হলে বিচারপতি মুনির এটিকে বৈধতা দেন (Mohammad Omar Khan v. Crown 5 DLR (WP) 115)। পাকিস্তানের গণতন্ত্রকামী বিমান সেনা এয়ার মার্শাল আজগর খান তাঁর Generals in Politics বইয়ে লিখেন, সেনাবাহিনীর জন্য এটি ছিল ক্ষমতার প্রথম আহবান। ১৯৫৩ সালেই আরেকবার রাজনীতিতে আমলাতন্ত্রের বেআইনি হস্তক্ষেপকে বৈধতা দেন বিচারপতি মুনির। গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদের স্বেচ্ছাচারিতার স্বীকার হয়ে পাকিস্তানের নির্বাচিত গণপরিষদ ভেঙ্গে গেলে বিচারপতি মুনির তাঁর কুখ্যাত ডকট্রিন অব নেসেসিটির আশ্রয় নিয়ে গোলাম মোহাম্মদের পাশে দাঁড়ান (Moulovi Tamizuddin Khan v. Federation of Pakistan 7 DLR (P) 121 এবং Special Reference of the Governor General 7 DLR (FC) 395)। ৫ বছর পর, ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে ইস্কান্দার মীর্জা ও আইয়ুব খানের যৌথ উদ্যোগে প্রত্যক্ষ সেনাশাসন জারি হলে বিচারপতি মুনির তাঁর আরেক কুখ্যাত তত্ত্ব ডকট্রিন অব ইফিকেসি নিয়ে আবারো সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ান (State v. Dosso 11 DLR (SC) 1)। তারও আগে, বিচারপতি মুনির আইয়ুব ইস্কান্দারকে ক্ষমতা নেয়ার পথ কিভাবে বাতলে দিয়েছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ এয়ার মার্শাল আজগর খানের Generals in Politics বইয়ে পাওয়া যায়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয় এবং ভুট্টোর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্ট প্রথমবারের মত রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের নিন্দা করেন (Asma Jilani v. Punjab PLD 1972 SC 139)। সুপ্রিম কোর্টের এ সাহসিকতা অবশ্য পাঁচ বছরের বেশি টেকেনি। ১৯৭৭ সালে জিয়াউল হক ক্ষমতা নিলে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা সেনা সরকারের নতুন সংবিধানের অধীনে নতুন শপথই শুধু নেননি বরং পাকিস্তানের চার প্রাদেশিক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা সামরিক আইনের অধীনে নিজ নিজ প্রদেশের গভর্নরের দায়িত্বও নেন। সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতি ইয়াকুবকে সরিয়ে বিচারপতি আনোয়ারুল হকŴক নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। এরম মাধ্যমে দেখা গেল, জুলফিকার আলী ভুট্টোর স্ত্রী বেগম নুসরাত ভুট্টো পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে জিয়াউল হকের ক্ষমতা গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করার আগেই সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউল হকের সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার মেনে নিয়েছেন! অতএব Begum Nusrat Bhutto vs. Chief of the Army Staff 1977 PLD 703(SC) মামলাটি বিচারপতি মুনিরের ১৯৫৩ সালে দেয়া ডকট্রিন অব নেসেসিটি দিয়ে সেনা বাহিনীর পক্ষেই নিস্পত্তি হয়। কদিন পরে, সেনা প্রধান জিয়াউল হক রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে চাইলে Malik Ghulam Jilani v. Punjab PLD 1979 Lahore 564 মামলায় সেটিকেও বৈধতা দেয়া হয়। ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচুত্য করেন। এবারও দেখা যায় পাকিস্তানী সুপ্রিম কোর্ট ডকট্রিন অব নেসেসিটি দিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে মামলা নিস্পত্তি করেন (Syed Zafar Ali Shah vs. General Parvaiz Musharraf 2000 PLD 1208 (SC)।
গোলাম মোহাম্মদ, ইস্কান্দার মীর্জা, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউল হক এবং পারভেজ মোশারফের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে পাকিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক পরিমন্ডলে সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন স্বার্থ মিলে গেলে মাত্রই সেনা অভ্যথান হয়েছে। প্রতিটি সংবিধান বহির্ভূত হস্তক্ষেপের আগে পরের পরিস্থিতি সৃষ্টিতে পাকিস্তানী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কোন না কোন সংশ্লিষ্টতা বা ব্যবহৃত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। পারভেজ মোশারফের হাতে ক্ষমতাচুত্য হওয়ার আগে ১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রপতি ফারুক লেঘারি ও প্রধান বিচারপতি সাজ্জাদ আলী শাহ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে আদালত অবমাননার দায়ে দন্ডিত করে ক্ষমতাচুত্য করার চেষ্টা চালান। এর জেরে ফারুক লেঘারি ও সাজ্জাদ আলী শাহ অবসর নিতে বাধ্য হলেও, নওয়াজ শরীফ আর দু-বছরের বেশি ঠিকতে পারেন নি। ১৯৯৯-২০০৯ সময়কালে পাকিস্তান আরেক দফা সেনাশাসনের মধ্য দিয়ে যায়। ফলত, নওয়াজ শরীফকে নিয়ে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের এবারের রায় নিয়েও আদালতের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেটিকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কারণ মূলত দুটি। এক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে নওয়াজ সরকারের অবস্থান নিয়ে ডওনাল্ড ট্রাম্প ভীষণ বেজার এবং পাকিস্তানের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা তিনি ইতোমধ্যেই বলেছেন। দুই, এ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত তদন্ত কমিটিতে একজন উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন!
২.
নওয়াজ শরীফের পদচূত্যিতে আনন্দিতরা অবশ্য বলছেন, অতীত যা-ই হোক সাম্প্রতিক ইতিহাসে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের বিচারিক তৎপরতা ও স্বকীয়তা বজায় রাখার প্রচেষ্টা আশাবঞ্জ্যক। সংশয়বাদীরা অবশ্য অতটা উদ্ভেলিত নন। আদালতের অতি তৎপরতার সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে তারা চিন্তিত।
সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক সাফল্য চোখে পড়ার মত। ২০০৯ সালে পারভেজ মোশারফ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মাহমুদ চৌধুরী। বিচারপতি ইফতিখার অবশ্য ২০০০ সালে জাফর আলী শাহ মামলায় মোশাররফের ক্ষমতা দখলের বৈধতা দেয়া বিচারকদের একজন। মোশাররফের সাথে তাঁর সংঘাত শুরু হয় ২০০৭ সালে। পারভেজ মোশারফকে চ্যালেঞ্জ না করেও কিছুটা বিচারিক তৎপরতা দেখাতে গিয়ে পদচুত্য হন বিচারপতি ইফতেখার। আদালতের রায়ে বিচারপতি ইফতিখার পদ ফিরে পেলে পারভেজ মোশাররফ জরুরি অবস্থা জারি করে তাঁকে আবারো পদচুত্য করেন। আইনজীবী সমাজ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জোরালো সমর্থন নিয়ে বিচারপতি ইফতিখার আবার ফিরে আসেন। ২০০৯ সালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মোশাররফ বিদায় নিতে বাধ্য হন আর বিচারপতি ইফতিখার ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি থাকেন। ২০০৯-২০১৩ সাল সময়ে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্ট ব্যাপক কর্ম তৎপরতা দেখায়। রাজনৈতিক বিবেচনায় মোশারফ সরকারের ক্ষমা করে দেয়া প্রতিটি মামলার পুনরুজ্জীবন দেয়া, উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ও সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিদের দুর্নীতি অনুসন্ধান ও বিচার, স্ব-প্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার দেয়ার চেষ্টা, নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ এবং গুরুত্বপূর্ণ সংবিধানিক ও প্রশাসনিক পদে নিযুক্তিতে স্বচ্ছতা আনয়নের চেষ্টাসহ অনেক ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্টের সাফল্য নজরে আসে এবং পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক উদ্দিপনা সৃষ্টি করে। তবে বিচারপতি ইফতিখার চৌধুরীর মেয়াদকালের কয়েকটি ঘটনা তাঁর আদালতের তৎপরতার প্রতি বেশি আস্থাশীল হওয়াকে বাধাগ্রস্থ করে।
প্রথমত, পাকিস্তানের সংবিধানের ১৮তম সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে সংসদের অংশগ্রহণের প্রশ্ন আসলে আদালত তা মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং বিচারক নিয়োগে সংসদীয় কমিটির সুপারিশকে বিচারিক রিভিউর আওতায় আনার পক্ষে রায় দেন। দ্বিতীয়ত, ২০১৩ সালের মে মাসের নির্বাচনের ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ক্রিকেটার ইমরান খানের দল দেশে প্রায় সেনা হস্তক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি করে ফেললেও সম্ভবত রিটার্নিং অফিসাররা সবাই নিম্ম আদালতের বিচারক হওয়ায় বিচারপতি ইফতেখার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অস্বীকার করেন। তৃতীয়ত, ২০১২ সালে অভিযোগ আসে কয়েকটি বহুজাতিক কর্পোরেশনের মামলায় বিচারপতি ইফতেখার চৌধুরীর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য তাঁর ছেলে ঘুষ নেন। অভিযোগটি স্বপ্রণোদিত হয়ে আমলে নিলেও ওই বেঞ্চে নিজে না থাকার দাবী বিচারপতি ইফতেখার অগ্রাহ্য করেন। তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় নি বলে রায় আসে। চতুর্থত, অনেকগুলো দুর্নীতি মামলার তদন্ত ভার নিজে নিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট মামলা নি¯পত্তি করতেই ব্যর্থ হন এবং নির্বাহী বিভাগের কাছে অসহায় আতœসমর্পণ করেন। বিচারিক তৎপরতায় এ ধরনের মানসিকতাকে সমালোচক মহল পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের স্বার্থ-তাড়িত আইন দর্শন (self interested jurisprudence) বলে আখ্যায়িত করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবে "স্বার্থ-তাড়িত আইন দর্শনে" অভ্যস্থ কোন আদালত খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ভঙ্গুর গণতন্ত্রের একটি দেশের দুই দুই জন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে পদচূত্য করে দিলে সেটি একেবারে অমুলক সন্দেহের জম্ম দেয় কিনা। লেখা শেষ করতে চাই ভারতীয় সংবিধান বিশারদ উপেন্দ্র বক্সীর উদ্ধৃতি দিয়েঃ "সুপ্রিম কোর্ট রাজনীতি করেন আইন ও তত্ত্বের মাধ্যমে। এ বাস্তবতা মেনে নিলেও আমরা প্রশ্ন করতে পারি - গণতান্ত্রিক সমাজে সুপ্রিম কোর্টের কেমন রাজনীতি করা উচিত?" (The Indian Supreme Court and Politics (1979) p. 10)।


Judgment Review


The Sixteenth: A Simple Amendment Un-simplified






[ষোলতম সংশোধনীর ৭৯৯ পৃষ্ঠার রায়ের উপর ১২০০ শদের একটি মূল্যায়ন। মূল্যায়নটি উচ্চ আদালতের প্রতি বেশ খানিকটা সমালোচনামুখর। আমি অবশ্য রাজনৈতিক সমালোচনার চেয়ে নীতিগত (jurisprudential) সমালোচনার দিকেই মনোযোগ দিয়েছি। আজ (24 August 2017) 
দেখলাম দ্য ডেইলি অবজারভার এর ল এন্ড জাস্টিস পাতায় মূল্যায়নটি ছাপানো হয়েছে। লেখাটি অভজারভারে পৌঁছে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ। দ্য ডেইলি অবজারভার এর লিংক লেখার শেষে দেয়া আছে।]








































16th Amendment to the Constitution of Bangladesh has been at the centre of public discourse for some couple of months. People opposing the amendment are accusing the proponents for being too much academic and ignorant of the “reality”. The proponents in their turn are blaming the opponents for being too much “presentist” and defiant of the institutional and structural arrangements of the constitution- the supreme law of the land. On a personal level, a thorough reading of the judgments by the High Court Division and Appellate Division fetched an impression in me that the geographical fault line of the arguments for and against the amendment is neither academic nor practical. It is rather a “simple constitutionality challenge” (borrowing words from S.K. Sinha CJ, Appellate Division Judgment, p 7) un-simplified on grounds that are deeply psychological and remotely related to any standard constitutional adjudication.

Factors simplifying the case are two-fold. First, both sides of the argument acknowledged the presence of some “Basic Structures” in the constitution, though there are a lot of people who reject the dogma. Second, both the sides admitted Independence of Judiciary as one of those basics. This being settled, the question that called for answer is simply this – “Which of the two alternatives - parliament or the supreme judicial council - would preserve the Independence of Judiciary?”
While a simple question usually invites a simple answer, this one got un-simplified by some so-called “long and chequered history” (AD Judgment, p 8) preceding the amendment. From all their intents and purposes, the writ petitioners, amicus curies and the judges in the High Court Division and Appellate Division attempted to adjudicate a constitutional amendment on perceptions that are overwhelmingly jaundiced and fetched by unacceptable pride and prejudices. Golden thread of the mentality is that parliamentary involvement in judges’ removal process is a threat upon the judicial independence and it must be rejected. Look at some of the comments and observations made throughout the judgment of the Appellate Division:
In absence of a free and fair election the Parliament may be lacking wise politicians and therefore may not be matured enough to handle the removal of Supreme Court Judges (p 205). The women members in the reserved seats are not elected and hence not suitable to sit over impeachment of judges (p 214). Even the elected representatives will not be able to exercise their judgment free from party dominance due to the infamous article 70 (p 270-282). Criminalization of parliament and politics is a serious concern (p 192). The power is therefore not safe in the hands of “power monsters” (p 228). Not all things done by the military rulers are bad. Things that are “useful,” “tend to advance or promote the need of the people” and “augment the independence of judiciary and welfare of the people” etc may be welcomed (p 149). Parliamentarians moved for the amendment in a “knee-jerk reaction” to some earlier tussles between the executive and the judiciary (p 601). Parliamentarians are extremely interested in legislating on judges’ removal while failing to legislate on their appointment first (p 782). Before assuming the power, parliamentarians should have thought “whether they are capable of dealing with such responsibility” (p 223). The power would be used as an instrument to penalize or intimidate Judges (p 328). A judge may be removed for a decision given on an important or sensitive issue (p 473, 549). Judges may face dilemma in handling cases against the parliamentarians (p 199). Relying on institutional virtuosity in this case would not be safe because institutions are comprised of human being ultimately (p 226). If some human-being are to be trusted at all, it must be the judges (p 234). “The Supreme Court is respected internally and globally for its professionalism and unbiased rulings and people from all walks of life repose faith upon it all the time” (p 334). “Thus when the question of removal of any person holding a post of Supreme Court Judges’ status arises, that should be and must be dealt with by such council of their own people, of course higher in rank” (p 796). It is therefore “an irony that the Parliament is totally unable to transact its basic functions but [it] wants to wise-pull one of the most successful organs of the State, that is, the Supreme Court of Bangladesh” (p 219).
Ideally, the legal question for this legal dispute called for a constitutional, structural and institutional answer. This unfortunately was not the case in this case. Like all other constitutional office bearers, the Judges take an oath to discharge their official responsibilities without any “fear or favour”. The over-all psyche as transpires from the comments and observations mentioned above shows that the Court was most probably driven by a “fear” of the legislature and legislative process and a “favour” towards protectionism and its own institutional grandeur. So sensitive was the Bench that Barrister Ajmalul Hossain QC’s purely legalistic request to be “extremely careful” in deciding a case involving its institutional interest was taken by the Court as “highly unkind and derogatory” (p 235). Law folks very rarely face such a tough reply.
With this un-simple psyche taking the driving seat of the case, a lot of other simply legal arguments attempted by the parties, lawyers and the Court were bound to be less emphasized, misinterpreted or even misguided. Since the word limits of this article prohibits a detailed analysis those, I would like to rest by pointing out at least four areas where the Court have attempted to innovate principles to hardly be found within the four corners of our constitutional jurisprudence.
First, putting the horse before the cart, the Court argued that ours is a popular sovereignty limited by the constitution and its patent and latent basic structures. Peoples’ representatives will exercise the peoples’ power subject to the basic structures determined by the unelected judges. Here in Bangladesh, the written constitution and its unscripted basic structures would guide the peoples’ will, not the vice versa (p 481-82, 591). Secondly, “under the constitution, the higher judiciary is entirely separated from the Executive and Legislature and is absolutely independent” (p 239). Thirdly, apart from basic structures, parliament’s amendment power has a new stumbling block. It may not “restore” or “return to” the original constitution since these words are not used in article 142 (p 321, 593). Fourthly, Anwar Hossain Chowdhury case was so far understood as saying that dislodging of basic structures of the original constitution is not permitted even through subsequent constitutional amendments. It now appears that some basic structures may be dislodged by subsequent amendments (like 4th and 5th amendments) and if lucky enough to be condoned by the Court (like 5th amendment case), they may even generate fresh basic structures and we must start counting the basic structures a fresh from there (p 354-55, 575-76, 584).
On a closing note, the position taken by Mr. Justice Hassan Foyez Siddiqui at page 756 of the judgment has the potential to offer a plausible middle ground in this emotionally charged un-simplified legal battle. Justice Siddiqui calls for the investigative role to be assigned to the Supreme Court while the impeachment or removal power may constitutionally reside with the parliament.





Rohingyas are now the world's most persecuted community. World powers and rights advocates however struggle hard in finding an appropriate terminology for the persecution. With the politics of regional influence, investment and arms deals in the background, China, India, Russia and United States are playing with words to downplay a clear case of genocide. International human rights bodies and governments are merely lurking behind the reality under some elusive terminological pretexts.This write up attempts to understand this politics of terminology from a critical perspective and seeks to locate where Bangladesh's position should ideally be.
While Norendra Modi's ultra-right BJP government is more concerned with the “extremist violence” in Myanmar,it hopes for “peace, justice, dignity, and democratic values for all.” China sees it as an essentially “internal” problem of Myanmar and “sincerely hopes [Myanmar] to restore stability as soon as possible and the local people [to] live a normal life again.” Russia, on the other hand, sees the problem as an “inter-religious conflict” that must be resolved through inter-religious dialogue. After the initial “voicing of concern” over the issue, the cautious and calculative United States has recently elevated its understanding to an “ethnic cleansing” and “horrendous atrocities” causing “tremendous suffering” to the Rohingya population.
At the organisational level, the United Nations Secretary General diplomatically calls it a “human rights nightmare.” Amnesty International, however, has travelled up to the “Crime Against Humanity.” Human Rights Watch on the other hand adopted “Ethnic Cleansing”. The United Nations High Commissioner for Human Rights also termed it “a textbook example of ethnic cleansing”.The UK government approached the problem as a “fastest growing humanitarian catastrophe.” Interestingly, a recent statement of the UK Foreign office suggests that they received "very troubling" evidence which “will be used to assess whether genocide has been committed” against Rohingya Muslims in Burma.
While the latest position of the UK government marks a welcome sign of growing international awareness about the issue, a recent seminar in the UK Parliament (Seminar on International Response to Rohingya Crisis organised by Centre for Turkey Studies, 29 November 2017) calls the time a ripe one for terming the atrocity a genocide plain and simple. The keynote speaker of the seminar was Professor Penelope J Green, Founder and Director ofInternational State Crime Initiative (ISCI) based in the Queen Mary University London. In 2015, ISCI conducted an18-month-long study on the Rohingya persecution and published its report titled, “Countdown to Annihilation: Genocide in Myanmar.” Though the 2015 report of ISCI termed the process as a “highly organised and genocidal in intent”, Professor Green is convinced that it is visibly and undoubtedly a genocide now. A shadow students' tribunal staged recently by the Society for Critical Legal Studies in Chittagong has proved that elements of genocide are strongly present in Myanmar. Even before that, a leading jurist of the country Barrister M Amir-Ul Islam framed the case as a “Clinical Illustration of Genocide” in one of his presentations before the SAARC LAW conference in Sri Lanka.
ISCI has endorsedthe Six Stage of Genocide Model of Professor Daniel Feierstein (Genocide as Social Practice). It is a prism through which ISCI considered how the Rohingya persecution elevated to genocide.The process started with stigmatisation. Starting with the denial of citizenship in 1970s, Rohingya community has been successfully alienated from the Burmese citizenry. With all deliberative official patronisation, the group has been snatched away of their “Rohingya” identity. With an enforced identity “illegal Bengali migrants” tagged over them, they have been made extremely unpopular among the Burmese majority. At the second stage of the process, official and unofficial harassment, deprivation, arbitrary arrests and detention, violence and terror were unleashed for a considerable period of time. Third stage of the process involved political, legal, social and geographical isolation to sever their historically existing relations with the broader Burmese community. Fourth stage of the process involved systematic weakening of the group by enforced malnutrition, epidemics, torture and sporadic violence and psychological destruction by humiliation and persistent abuse. At the fifth stage of the process the state ensures the “physical destruction of the group as such” (the key element of genocide)through mass killing and persecution. Last stage of the genocidal process would involve symbolic enactment by rebuilding a society where the targeted group is clearly “gone”. Professor Green argues that 2017 August-October atrocities of the Myanmar regime undoubtedly mark the final stage of the genocidal process and the world must act NOW.

While our immediate concern with the “Refugee Aspect” of the problem is understandable, should we shut-down acollateral strategy of creating the highest possible pressure upon Myanmar regime by bringing the “Genocidal Aspect” to light? With our genocide stricken traumatic past, who else is better suited than Bangladesh to make a “Stop Genocide” call to the world? Bangladesh government unfortunately continues to echo the European Union by agreeing to see it as the “fastest-growing refugee crisis creating a refugee emergency”. While our rough neighbour continues to give us a tough time on the refugee repatriation talk, they are enjoying our silence on the “Genocidal Aspect” most, I am sure.Unfortunately, the world seems reluctant to take note of the concern. Professor Penelope J Green herself unveils the most plausible account of this politics of terminologies.The world super powers are politically reluctant to take theobligations a finding of genocide would cast upon them under the 1948 Genocide Convention. It is the obligation to prosecute the perpetrators - to kick off the International Criminal Court (ICC) process straight. For reasons not understandable, neither the UN Security Council nor the ICC Prosecution department is showing much interest in that line. Question then comes, what our government is doing?

The writer is an Assistant Professor, Department of Law, University of Chittagong.

The existential threat for executive run magistrate courts


JUDGMENT REVIEW 

Law and Our Rights, The Daily Star, Law and Our Rights, 25 July 2017 
Link: https://www.thedailystar.net/law-our-rights/the-existential-threat-executive-run-magistrate-courts-1438096  


For many of us, including me, the Mobile Court Act 2009 remained a stillborn legislation since its inception on the face of a rebellious Rokon-Ud-Doula in 2007. Presumably, the lawyers and judges alike took it as a strategic and temporal concession on the part of the judiciary and a face-saving-condolence for the BCS (Admin) that was otherwise adamant not to see the whole administration of criminal justice passing out of its hold overnight. While the lawyers' and judges' long run struggle for implementing Masder Hossain verdict found its way-through in November 2007, constitutionality of the executive run mobile courts was to be tested sooner or later. And now, after around 10 years of the reluctant concessions, the chickens come home to roost. Kamruzzaman Khan v Bangladesh (W/P No. 8437/2011) along with some other writs of similar nature challenged several convictions and fines imposed upon the litigants by mobile courts run by executive officials on different occasions.

The petitioners challenged their trials and convictions with foundational and section-wise challenges to the 2009 law. Petitioners labeled the law as colourable one (p. 4 of the full text judgment). The court also found it running counter to the mandates of Article 22 of the constitution and Masder Hossain ratio though it pretended to pursue those (p 26). Article 22 and Masder Hossain verdict combined left no scope whatsoever for the executive magistrates to exercise judicial powers and discharge judicial functions (p. 44). With Article 35 of the constitution guaranteeing an “independent and impartial court or tribunal established by law” for us, 2009 Act permitted the executive magistrates to be the investigator, prosecutor, witness and judge all in a single proceeding (p 43). Interestingly, section 13 of the Act towered the authority executive magistrates even higher. It allowed the District Magistrate or Additional District Magistrate to be the appellate authority of any mobile court trial conducted by their colleagues in the administration. The court, therefore, adjudged the sections 5, 11 and 13 of the Act contemplating executive run mobile courts and appellate courts as contradictory to Articles 22, 27, 31 and 35(3) of the Constitution (pp. 55-56). 

The Mobile Court Act dug a bottomless well of unfettered powers, unrestricted discretions, unguided sentencing options and unreasonable modes of handling trials. Firstly, section 6(2) of the Act conferred jurisdiction on the magistrates over a charter of offences to be endlessly expanded under rule making power of the government. The court found it contravening a settled proposition of law that no offence can be created and punished under any delegated or subordinate or subsidiary legislation (p. 52). Moreover, the breadth of the rule making so delegated was “really astounding” as parliament delegated (section 15) its plenary power of amendment in the schedule (an integral part of the law) in favour of the government (p. 56). 

Secondly, section 6(4) left a blank check in the executive's desk to determine which offences would be “grievous in nature” to be tried by regular courts and which others are not. In a flagrant disregard of Article 27 of the Constitution, the magistrates would just pick and choose at their sweet will as to whom to prosecute then and there and whom to commit to the regular courts for trial (p 53). Likewise, sections 8 and 9 of the Act would permit the magistrates to inflict discriminatory sentences and execute them in a grossly unreasonable way (p. 54-55). 

Thirdly, while the power to impose punishment by the Mobile Court is made subject to a “voluntary confession” of guilt by the accused, section 7 does not provide any clue as to how to obtain and record the “voluntary confession.” In absence of any section-164-like mechanism for obtaining confession, undue pressure and coercion were most likely to reign the ring (p. 53). 


Towards the end of the judgment, however, the petitioner and the court conceded that while mobile courts symbolising the “justice on wheels” (p 46) are not unknown in our neighboring South Asian jurisdictions, permitting the executive run kangaroo courts under the guise would be 'de hors' the Constitution (p. 56). Advocate A F Hasan Arif unsuccessfully tried to convince the court that with Article 116A of the Constitution safeguarding the presiding magistrates' functional independence (p. 22), courts run by them may not be readily labeled as kangaroo courts. The Court stroke down the submission by holding that Article 116A has lost all its relevance with effect from 1st November, 2007 (p. 61). By holding this the court was best possibly pointing to the existential threats the “magistrates exercising judicial functions” are facing after the Masder Hossain verdict. Scope of the executive magistrates' exercising judicial functions being barred, the Court calls for mobile courts, if there be any, manned by the members of the Bangladesh Judicial Service only (p. 63). 

As a matter of practicality, the court was ready to acknowledge the government's duty to maintain law and order and to prevent commission of offences. Yet as a matter of principle, it was not ready to abdicate the judicial power of cognizance and trial in favour of the government officials (p. 45). Unfortunately that was what the executive branch was asking for and the grandeur of magistracy being the bone of contention, the Mobile Court Act 2009 was bound to be nullified in due course of time. As I recollect from my recent conversation with an honorable judge of the High Court Division, mobile courts will not perish but the kangaroo courts will. 
The writer is an Assistant Professor, Department of Law, University of Chittagong.



In defence of the original constitution

[In October and November 2024 , Sifat Tasneem and I wrote a three-part series on Lawyer'sClub[dot]com calling the attempt to abrogate th...