Thursday, December 28, 2017


এম জসিম আলী চৌধুরী
দৈনিক সমকাল, মুক্তমঞ্চ,  ১২/০৮/২০১৭

[আজকের (১২/০৮/২০১৭) দৈনিক সমকালের মুক্তমঞ্চ পাতায় প্রকাশিত। পাকিস্তানি সুপ্রিমকোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের পতনে আমরা যারা উদ্বেলিত অথবা উদ্বিগ্ন তাদের জন্য তাদের জন্য আগ্রহ উদ্দীপক হতে পারে। দৈনিক সমকালে স্থান সংকুলানের জন্য কিছুটা পরিমার্জিত হওয়ায়, এখানে আমার মূল লেখাটা তুলে দিচ্ছি। শেষে সমকালের অনলাইন লিংক দেয়া আছে।]


নির্বাচনকালীন দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে আয় গোপন করার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন পাকিস্তানের নওয়াজ শরীফ। পানামা পেপারস নামের একটি বৈশ্বিক সাইবার কেলেঙ্কারিতে ফাঁস হয় নওয়াজ শরিফ অতীতে দুবাই ভিত্তিক একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং সে সুত্রে পাওয়া ১০ হাজার দিরহামের হিসাব তিনি তাঁর নির্বাচনকালীন সম্পদ বিবরণীতে দেননি। ফলে পাকিস্তানী সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সংসদ সদস্য পদে থাকার অযোগ্য ঘোষিত এবং প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন নওয়াজ। এর আগে আরেক ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিও সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার দায়ে দন্ডিত হয়ে পদ হারান। এ নিয়ে পাকিস্তানের ১৮ জন প্রধানমন্ত্রীর কেউই তাঁদের মেয়াদ পূরণ করতে পারেন নি। এর মধ্যে নওয়াজ শরীফ নিজেই তিন-তিন বার পদ হারালেন। প্রধানমন্ত্রীরা পদ হারিয়েছেন হয় রাষ্ট্রপতির নির্দেশ বা বহিস্কারাদেশের মাধ্যমে, নয় রাষ্ট্রপতির সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার ফলে অথবা সরাসরি সেনা অভ্যূত্থানের মাধ্যমে।
জনগণের রায়ে নির্বাচিত সরকার প্রধানের আদালতের রায়ে ক্ষমতা হারানোর ঘটনা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং বিজ্ঞ মহলকে বেশ আলোড়িত করেছে। সাধারণ মানুষের কাছে এটি পাকিস্তানী সুপ্রিম কোর্টের সাহসিকতা ও বিচারিক স্বকীয়তার দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিজ্ঞ মহলের কেউ কেউ অবশ্য এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ইশারা ইঙ্গিত এবং সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা আঁচ করছেন এবং দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার উপর আশু হুমকির আশঙ্কা করছেন। প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে - ১) পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট কি জেনে বুঝে সামরিক বাহিনীর স্বার্থ রক্ষা করছেন? নাকি ২) বিচারিক তৎপরতা (judicial activism)-র অতি প্রয়োগ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই সেনাবাহিনীর স্বার্থ উদ্ধারের গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন?
১.
পৃথিবীর অন্য অনেক সাংবিধানিক ব্যবস্থায় প্রথম প্রশ্নটি বেশ অস্বাভাবিক বিবেচিত হলেও, পাকিস্তানী রাজনীতিতে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের হস্তক্ষেপ এবং এর প্রতি বিচার বিভাগীয় সহনশীলতা (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমর্থন)-র "স্বাভাবিক" ইতিহাস নিঃসন্দেহে এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ করে দেয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি জম্ম নেয়ার পর থেকে হিসেব করলে দেখা যায়, পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত বরাবরই গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অগণতান্ত্রিক শক্তির অনুপ্রবেশ এবং হস্তক্ষেপে সহায়ক শক্তির ভূমিকা নিয়েছেন।
জম্মের মাত্র ছয় বছরের মাথায় পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করেন প্রধান বিচারপতি মুনির। ১৯৫৩ সালের গোঁড়ার দিকে সেনাবাহিনীর ইঙ্গিতে জামাত নেতা আবুল আলা মওদুদি করাচী ও লাহোর জুড়ে কাদিয়ানী দাঙ্গা উস্কে দেন। পুরো মার্চ-এপ্রিল জুড়ে সংগঠিত গণহত্যার দমনের অজুহাতে বেসামরিক সরকারের অনুমিত ছাড়াই মেজর জেনারেল আজম খান রাস্তায় নেমে আসেন। লাহোরে সামরিক আইন জারি করা হয় এবং কোর্ট মার্শালের নামের অনেককেই তাৎক্ষনিক বিচার ও শাস্তি দেয়া হয়। এ রকম একটি বিচারকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হলে বিচারপতি মুনির এটিকে বৈধতা দেন (Mohammad Omar Khan v. Crown 5 DLR (WP) 115)। পাকিস্তানের গণতন্ত্রকামী বিমান সেনা এয়ার মার্শাল আজগর খান তাঁর Generals in Politics বইয়ে লিখেন, সেনাবাহিনীর জন্য এটি ছিল ক্ষমতার প্রথম আহবান। ১৯৫৩ সালেই আরেকবার রাজনীতিতে আমলাতন্ত্রের বেআইনি হস্তক্ষেপকে বৈধতা দেন বিচারপতি মুনির। গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদের স্বেচ্ছাচারিতার স্বীকার হয়ে পাকিস্তানের নির্বাচিত গণপরিষদ ভেঙ্গে গেলে বিচারপতি মুনির তাঁর কুখ্যাত ডকট্রিন অব নেসেসিটির আশ্রয় নিয়ে গোলাম মোহাম্মদের পাশে দাঁড়ান (Moulovi Tamizuddin Khan v. Federation of Pakistan 7 DLR (P) 121 এবং Special Reference of the Governor General 7 DLR (FC) 395)। ৫ বছর পর, ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে ইস্কান্দার মীর্জা ও আইয়ুব খানের যৌথ উদ্যোগে প্রত্যক্ষ সেনাশাসন জারি হলে বিচারপতি মুনির তাঁর আরেক কুখ্যাত তত্ত্ব ডকট্রিন অব ইফিকেসি নিয়ে আবারো সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ান (State v. Dosso 11 DLR (SC) 1)। তারও আগে, বিচারপতি মুনির আইয়ুব ইস্কান্দারকে ক্ষমতা নেয়ার পথ কিভাবে বাতলে দিয়েছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ এয়ার মার্শাল আজগর খানের Generals in Politics বইয়ে পাওয়া যায়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয় এবং ভুট্টোর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্ট প্রথমবারের মত রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের নিন্দা করেন (Asma Jilani v. Punjab PLD 1972 SC 139)। সুপ্রিম কোর্টের এ সাহসিকতা অবশ্য পাঁচ বছরের বেশি টেকেনি। ১৯৭৭ সালে জিয়াউল হক ক্ষমতা নিলে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা সেনা সরকারের নতুন সংবিধানের অধীনে নতুন শপথই শুধু নেননি বরং পাকিস্তানের চার প্রাদেশিক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা সামরিক আইনের অধীনে নিজ নিজ প্রদেশের গভর্নরের দায়িত্বও নেন। সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতি ইয়াকুবকে সরিয়ে বিচারপতি আনোয়ারুল হকŴক নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। এরম মাধ্যমে দেখা গেল, জুলফিকার আলী ভুট্টোর স্ত্রী বেগম নুসরাত ভুট্টো পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে জিয়াউল হকের ক্ষমতা গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করার আগেই সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউল হকের সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার মেনে নিয়েছেন! অতএব Begum Nusrat Bhutto vs. Chief of the Army Staff 1977 PLD 703(SC) মামলাটি বিচারপতি মুনিরের ১৯৫৩ সালে দেয়া ডকট্রিন অব নেসেসিটি দিয়ে সেনা বাহিনীর পক্ষেই নিস্পত্তি হয়। কদিন পরে, সেনা প্রধান জিয়াউল হক রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে চাইলে Malik Ghulam Jilani v. Punjab PLD 1979 Lahore 564 মামলায় সেটিকেও বৈধতা দেয়া হয়। ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচুত্য করেন। এবারও দেখা যায় পাকিস্তানী সুপ্রিম কোর্ট ডকট্রিন অব নেসেসিটি দিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে মামলা নিস্পত্তি করেন (Syed Zafar Ali Shah vs. General Parvaiz Musharraf 2000 PLD 1208 (SC)।
গোলাম মোহাম্মদ, ইস্কান্দার মীর্জা, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউল হক এবং পারভেজ মোশারফের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে পাকিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক পরিমন্ডলে সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন স্বার্থ মিলে গেলে মাত্রই সেনা অভ্যথান হয়েছে। প্রতিটি সংবিধান বহির্ভূত হস্তক্ষেপের আগে পরের পরিস্থিতি সৃষ্টিতে পাকিস্তানী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কোন না কোন সংশ্লিষ্টতা বা ব্যবহৃত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। পারভেজ মোশারফের হাতে ক্ষমতাচুত্য হওয়ার আগে ১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রপতি ফারুক লেঘারি ও প্রধান বিচারপতি সাজ্জাদ আলী শাহ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে আদালত অবমাননার দায়ে দন্ডিত করে ক্ষমতাচুত্য করার চেষ্টা চালান। এর জেরে ফারুক লেঘারি ও সাজ্জাদ আলী শাহ অবসর নিতে বাধ্য হলেও, নওয়াজ শরীফ আর দু-বছরের বেশি ঠিকতে পারেন নি। ১৯৯৯-২০০৯ সময়কালে পাকিস্তান আরেক দফা সেনাশাসনের মধ্য দিয়ে যায়। ফলত, নওয়াজ শরীফকে নিয়ে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের এবারের রায় নিয়েও আদালতের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেটিকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কারণ মূলত দুটি। এক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে নওয়াজ সরকারের অবস্থান নিয়ে ডওনাল্ড ট্রাম্প ভীষণ বেজার এবং পাকিস্তানের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা তিনি ইতোমধ্যেই বলেছেন। দুই, এ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত তদন্ত কমিটিতে একজন উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন!
২.
নওয়াজ শরীফের পদচূত্যিতে আনন্দিতরা অবশ্য বলছেন, অতীত যা-ই হোক সাম্প্রতিক ইতিহাসে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের বিচারিক তৎপরতা ও স্বকীয়তা বজায় রাখার প্রচেষ্টা আশাবঞ্জ্যক। সংশয়বাদীরা অবশ্য অতটা উদ্ভেলিত নন। আদালতের অতি তৎপরতার সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে তারা চিন্তিত।
সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক সাফল্য চোখে পড়ার মত। ২০০৯ সালে পারভেজ মোশারফ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মাহমুদ চৌধুরী। বিচারপতি ইফতিখার অবশ্য ২০০০ সালে জাফর আলী শাহ মামলায় মোশাররফের ক্ষমতা দখলের বৈধতা দেয়া বিচারকদের একজন। মোশাররফের সাথে তাঁর সংঘাত শুরু হয় ২০০৭ সালে। পারভেজ মোশারফকে চ্যালেঞ্জ না করেও কিছুটা বিচারিক তৎপরতা দেখাতে গিয়ে পদচুত্য হন বিচারপতি ইফতেখার। আদালতের রায়ে বিচারপতি ইফতিখার পদ ফিরে পেলে পারভেজ মোশাররফ জরুরি অবস্থা জারি করে তাঁকে আবারো পদচুত্য করেন। আইনজীবী সমাজ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জোরালো সমর্থন নিয়ে বিচারপতি ইফতিখার আবার ফিরে আসেন। ২০০৯ সালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মোশাররফ বিদায় নিতে বাধ্য হন আর বিচারপতি ইফতিখার ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি থাকেন। ২০০৯-২০১৩ সাল সময়ে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্ট ব্যাপক কর্ম তৎপরতা দেখায়। রাজনৈতিক বিবেচনায় মোশারফ সরকারের ক্ষমা করে দেয়া প্রতিটি মামলার পুনরুজ্জীবন দেয়া, উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ও সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিদের দুর্নীতি অনুসন্ধান ও বিচার, স্ব-প্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার দেয়ার চেষ্টা, নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ এবং গুরুত্বপূর্ণ সংবিধানিক ও প্রশাসনিক পদে নিযুক্তিতে স্বচ্ছতা আনয়নের চেষ্টাসহ অনেক ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্টের সাফল্য নজরে আসে এবং পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক উদ্দিপনা সৃষ্টি করে। তবে বিচারপতি ইফতিখার চৌধুরীর মেয়াদকালের কয়েকটি ঘটনা তাঁর আদালতের তৎপরতার প্রতি বেশি আস্থাশীল হওয়াকে বাধাগ্রস্থ করে।
প্রথমত, পাকিস্তানের সংবিধানের ১৮তম সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে সংসদের অংশগ্রহণের প্রশ্ন আসলে আদালত তা মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং বিচারক নিয়োগে সংসদীয় কমিটির সুপারিশকে বিচারিক রিভিউর আওতায় আনার পক্ষে রায় দেন। দ্বিতীয়ত, ২০১৩ সালের মে মাসের নির্বাচনের ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ক্রিকেটার ইমরান খানের দল দেশে প্রায় সেনা হস্তক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি করে ফেললেও সম্ভবত রিটার্নিং অফিসাররা সবাই নিম্ম আদালতের বিচারক হওয়ায় বিচারপতি ইফতেখার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অস্বীকার করেন। তৃতীয়ত, ২০১২ সালে অভিযোগ আসে কয়েকটি বহুজাতিক কর্পোরেশনের মামলায় বিচারপতি ইফতেখার চৌধুরীর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য তাঁর ছেলে ঘুষ নেন। অভিযোগটি স্বপ্রণোদিত হয়ে আমলে নিলেও ওই বেঞ্চে নিজে না থাকার দাবী বিচারপতি ইফতেখার অগ্রাহ্য করেন। তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় নি বলে রায় আসে। চতুর্থত, অনেকগুলো দুর্নীতি মামলার তদন্ত ভার নিজে নিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট মামলা নি¯পত্তি করতেই ব্যর্থ হন এবং নির্বাহী বিভাগের কাছে অসহায় আতœসমর্পণ করেন। বিচারিক তৎপরতায় এ ধরনের মানসিকতাকে সমালোচক মহল পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের স্বার্থ-তাড়িত আইন দর্শন (self interested jurisprudence) বলে আখ্যায়িত করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবে "স্বার্থ-তাড়িত আইন দর্শনে" অভ্যস্থ কোন আদালত খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ভঙ্গুর গণতন্ত্রের একটি দেশের দুই দুই জন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে পদচূত্য করে দিলে সেটি একেবারে অমুলক সন্দেহের জম্ম দেয় কিনা। লেখা শেষ করতে চাই ভারতীয় সংবিধান বিশারদ উপেন্দ্র বক্সীর উদ্ধৃতি দিয়েঃ "সুপ্রিম কোর্ট রাজনীতি করেন আইন ও তত্ত্বের মাধ্যমে। এ বাস্তবতা মেনে নিলেও আমরা প্রশ্ন করতে পারি - গণতান্ত্রিক সমাজে সুপ্রিম কোর্টের কেমন রাজনীতি করা উচিত?" (The Indian Supreme Court and Politics (1979) p. 10)।

No comments:

Post a Comment

Religious Equality and Secularism in India: A Critical Review of the Ayodhya-Babri Mosque Judgment Dr M Jashim Ali Chowdhury* Jubaer Ahmed**...